অবতক খবর, সংবাদদাতা , 27 শে নভেম্বর :: ম্যাজিক ফিগার থেকে দুজন বেশি কাউন্সিলর নিয়ে ভাটপাড়া পৌরসভা বিজেপির দখলে থাকা পৌর বোর্ডের বিরুদ্ধে বোর্ড মিটিংয়ে দাপালেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। তারা শক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে আজ চেয়ারম্যান সৌরভ সিংকে হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেন যে এটা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার আগে ট্রেইলার মাত্র।

আজ ভাটপাড়ায় বোর্ড মিটিংয়ে টানটান উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। কারণ প্রায় 12 জন কাউন্সিলর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করার পর এই প্রথম ভাটপাড়ার চেয়ারম্যান সৌরভ সিং সংখ্যালঘু অবস্থায় বোর্ড মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।

সংখ্যা অনুযায়ী 17 জন কম করে কাউন্সিলর থাকার দরকার বোর্ড গঠন ধরে রাখতে গেলে কিন্তু এই মুহূর্তে চেয়ারম্যান সৌরভ সিংহের পক্ষে অর্থাৎ বিজেপির মাত্র 13 জন কাউন্সিলর তাদের পক্ষে রয়েছেন । প্রায় 12 জন কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। এর ফলে তৃণমূল কাউন্সিলরদের সংখ্যা 12 ও 5 অর্থাৎ সতেরো জন দাঁড়ায়। আরো একজন কাউন্সিলর ইতিমধ্যে আবার তৃণমূলে যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন । এই অবস্থায় মোট 18 জন কাউন্সিলর তৃণমূলের পক্ষে।

ভাটপাড়া পৌরসভার মোট কাউন্সিলর সংখ্যা 32 জন একজন কাউন্সিলর জেলে রয়েছেন । তাই 31 জনের মধ্যে এখন বর্তমানে বিজেপিতে রয়েছেন 13 জন আর তৃণমূল কাউন্সিলরদের সংখ্যা 18 জন। এমন অবস্থায় বিজেপি বোর্ড কোনকিছুই পাশ করাতে পারবে না, এটা স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় কারণ তৃণমূল কাউন্সিলরা চেয়ারম্যান সৌরভ সিংহের বিজেপি বোর্ডের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনাস্থা আনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন।

বোর্ড মিটিং শুরু হতেই তৃণমূল কাউন্সিলররা সৌরভ সিংহের ব্যক্তিগত 5 জন সুরক্ষা গার্ডকে বোর্ড মিটিং হল থেকে বের করে দিতে বলেন। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন বোর্ড মিটিংয়ে কোন বহিরাগত গার্ড রাখা যাবে না যদিও এতদিন সৌরভ সিং তার ব্যক্তিগত  সুরক্ষাকর্মী দের সঙ্গে রেখেই বোর্ড মিটিং করেছেন কিন্তু আজ তৃণমূলীদের প্রতিবাদের পর তিনি 5 জন ব্যক্তিগত বডি গার্ডকে মিটিং হল থেকে বের করে দেন।

এছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ঘিরে ধরেন। তারা প্রতিবাদে বুঝিয়ে দেন যে এখন তিনি আর মাত্র কয়েক দিনের জন্য চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। 18 জন কাউন্সিলর বিভিন্ন দুর্নীতি পরিষেবা ও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরব হন।

10 নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোজ গুহ জানান, গত দুমাস ধরে পিএফ-এর টাকা পৌরসভায় কর্মচারীদের থেকে কাটা হলেও তাদের একাউন্টে জমা পড়ছে না। শুধু তাই নয়, তিনি অভিযোগ করেন যে কর্মচারীদের মাইনে দেওয়া হচ্ছেনা। MP লাইড থেকে 90 লক্ষ টাকা এসেছে কিন্তু সেগুলি আবার এমপি সাহেবের আত্মীয়-স্বজন দিয়ে তৈরি এন এস কনস্ট্রাকশনের একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে মনোজ গুহ জানান । তিনি জানান যে সৌরভ সিংকে এইগুলো নিয়ে অভিযোগ জানালে তিনি বলছেন সরকার থেকে কোন টাকা আসছে না, উন্নয়নের কাজ কি করে হবে কিন্তু অন্যান্য খাত থেকে টাকা এলে সরাসরি তাদের নিজের ফার্মের ফান্ডে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও কর্মীদের ব্যাংক লোনের টাকা পৌরসভা কর্মচারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হলেও তাদের টাকা ব্যাংকে জমা পড়ছে না। মনোজ বাবু আরো বলেন, পৌরপ্রধান আজ বুঝতে পেরেছেন যে তার আর বেশিদিন সময় নেই।

23 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সত্যেন রায় জানান যে চেয়ারম্যান বেআইনিভাবে কাউন্সিলরদের বসার রুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাউন্সিলরদের অপমান করেছেন । চেয়ারম্যান নিজের মতন কাজ করে চলেছেন তবে আজ প্রতিবাদ দেখে চেয়ারম্যান বুঝতে পেরেছেন যে আর তার সময় নেই।

13 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসির খান জানান, মানুষ কোন পরিষেবা পাচ্ছেনা। ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে , রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ, ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না, শ্রমিকরা টাকা পাচ্ছেন না। তাই আমরা আর কেউই বোর্ড মিটিংয়ে চা পর্যন্ত গ্রহণ করিনি। টিফিন মিষ্টি সব বয়কট করে দিয়েছি।

অন্যদিকে চেয়ারম্যান সৌরভ সিং বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ শোনেন ও সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, পিএফ নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে তিনি তার খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। এছাড়াও যেসকল সমস্যা রয়েছে সেগুলি দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা করবেন।