অবতক,১৬ নভেম্বর/ তমল সাহা :  আজ ভাতের গ্রাস নিশ্চয়ই আপনি মুখে তুলবেন তুলুন, আপত্তি নেই তার আগে লবণ হ্রদের বিকাশ ভবনের অদূরে তিনশো মিটার দূরে আপনার শিক্ষাকর্মী শিক্ষাজীবী কন্যা এবং পুত্রদের মুখটি মনে রাখুন। লাগাতার গণ অনশনে নামছেন তারা। গান্ধীর পথ। কারণ শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চায় তারা আন্দোলনের স্তর A-B-C-D। A অতিক্রান্ত হলো, অবস্থান- ধর্না।B তে পথ রাখলো আন্দোলন Bare Belly মানে ভুখা আন্দোলন। শুদ্ধ বাংলায় অনশন আন্দোলন। C-তে আন্দোলন যখন পথ রাখবে তখন কী কোনো Chaos সৃষ্টি হবে? আর চুড়ান্ত পর্যায়ে আন্দোলন যখন D স্তরে নামবে তখন কী সেটি Dangerous, Deadlier অথবা Dreadlier হয়ে উঠবে! এ অনুমান আশঙ্কা মাত্র। রাষ্ট্র কোনদিকে যায় সেটি হাওয়াও জানে।

বিকাশভবন। কাদের বিকাশ? কীসের বিকাশ? দিন ঢলে পড়ে রাতের গায়ে। রাত শেষ হতে চায় না। সূর্য ওঠে দেরি করে। জাতির মেরুদণ্ড বসেছে অবস্থানে, ধর্ণায়। সময় চলে ঘড়ির কাঁটায়। রাষ্ট্র কোথায়? আমি অদূরে দাঁড়িয়ে দেখি জলকামান। HRFS এর গাড়ি টহল দিয়ে যায়। আমি ভীতুর ডিম। ভয়ে ভয়ে মুখ থেকে সমস্ত শব্দ সরে যায়। রাষ্ট্র কি ত্রাস তৈরি করে মাস্টার মশাইদের ভয় পাইয়ে দিতে চায়?

বিশাল ছাউনির নীচে মাস্টারমশাই দিদিমণিরা। মন্ত্রীদেরও কোনোদিন মাস্টারমশাই ছিল, দিদিমণি ছিল। ছিল কি? যদি তাই থেকে থাকে তাহলে এমন ঘটনা ঘটছে কেন শিক্ষামন্ত্রীর নাকের ডগায়?

সমপদে সমবেতন হয় না কি? বৈষম্য থাকবে কেন? মন্ত্রীর মাসিক তঙ্খা বেড়ে যায়। ক্লাবগুলিও মদ ফুর্তির জন্য টাকা পায়। ধর্মের উস্কানি দিতে পুজো কমিটি অনুদান, পুজোর উপকরণ পায়। মেলার মহোৎসব চলে।অথচ হাজার হাজার শিক্ষাজীবীরা রোদে পোড়ে। অনেক দিদিমণিরা শিশুসন্তান নিয়ে অনশনে। পিতৃ অশৌচ উপেক্ষা করে ধরা গলায় সাদা থান পরে অবস্থানে বসেছেব মাস্টারমশাইরা।

পেট। একটি পেট নয়, পরিবারের পেটের সমস্যায় পড়েছেন তারা। ধর্ণা দেখতে গিয়ে পথ চলতে চলতে শুনতে পাই, এরা মন্ত্রী না কসাই? গ্রুপ করে পাহারা দেয় মাস্টারমশাইরা। রাত জাগে। জাগতে রাহো। দিদিমণিদের পাহারা দেয়।

আন্দোলন করবে আর কষ্ট করবে না? এও কী হয়? শৌচাগার- প্রক্ষালনের ব্যবস্থা নেই। লজ্জা। লজ্জা শব্দটি কী উধাও হয়ে গেল অভিধান থেকে? কী হবে? কখন কী হয়!  ভাত না দিতে পারুক কিল মারার গোঁসাই। জলকামান, পুলিশের গাড়ি, সাদা চোখ, নজরদারি ঠিক থাকে। তারা যথাস্থানে মজুত ও ভারি মজবুত।
তারা কি আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে চায়? সন্ত্রাস দেখিয়ে পিছু হটাতে চায়? নবান্নে অনেক দরবারের পর চিঠি গেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। লড়াকুদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন তারা। তারা কারা? মিরাতুন নাহার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ আরও আরও প্রমুখ। সরকারী রাজনৈতিক দল বাদে সবাই এককাট্টা আন্দোলনের পাশে। “এখনও যদি প্রতিবাদ না করি তবে আমি হত্যাকারী”– যে উচ্চারণ করেছিল সে নেই। কোথায় তার বজ্র-বিদ্যুৎ ভর্তি খাতা। কাক শিল্পী নেই। কারণ পরিবেশ দূষণে কাকও শেষ হয়ে গেছে। আমি বাংলায় গান গাই নেই। বোমার নির্মাণকারী নেই।চেয়ার মোছা নবরত্নের কবি নেই। আরও আরও কতকিছু নেই।

এবার গান্ধীর পথ নিল মাস্টারমশাই দিদিমণিরা। লাগাতার গণ অনশন। রাষ্ট্র বলছে অনশনে মরো। আমরা বলছি আমরা নইতো কারও। আমরা জেহাদি বলছি আমরা যখন পথে নেমেছি তখন আমরা আমাদের পথ নেব খুঁজে। সমস্ত কিছুই আমরা নেব বুঝে এবং যুঝে। আর কতদিন চুপ থাকবো মাথা গুঁজে? একটা এস্পার- ওস্পার করো। লড়াইয়ের অস্ত্র ধরো।