স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ
স্বাধীনতার পরও স্বাধীনতা মানে আত্মহত্যা
তমাল সাহা
বাবা বলেছিল স্বাধীনতা নিয়ে হাজার হাজার পদ্য লিখেছিল কবিরা।
কোনটা কবিতা কোনটা অকবিতা আমি বুঝিনা। স্বাধীনতা লিখতে গেলে শব্দের আবেগ থাকে। অথচ অধিকারজনিত বেগ দেখি না তাদের লিখনসজ্জায়!
স্বাধীনতা মানে আত্মহত্যা,আত্মঘাতী হওয়া– সুইসাইড,এও হতে পারে।
আত্মহত্যা করারও একটা স্বাধীনতা থাকে, সে যে যা বলুক এ নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে।
আত্মবলিদানে বাঙালির একটা গৌরব আছে। ড. সুনীল দাস প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
কলকাতার সেই বিখ্যাত হেয়ার স্কুল। বাবা আমাকে দেখিয়েছিল। ওই দেখো, ডেভিড হেয়ারের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। তিনি এই স্কুল তৈরি করেছিলেন আর রাজা রামমোহন রায় তাতে মদত দিয়েছিলেন। এই স্কুলের প্রাক্তনীদের জানো? রাজনারায়ণ বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু আরো কতজন!
সেখানে পড়াতেন ড. সুনীল দাস। তিনি শিক্ষারত্ন পেয়েছিলেন শিক্ষক দিবসের দিন। সেটা ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
দেবীপুর পূর্ব বর্ধমানের মানুষ তিনি।
তিনি ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়েছিলেন। ৩ বছর ধরে পেনশন পাচ্ছিলেন না। সরকারি লাল ফিতের ফাঁসে আটকে গিয়েছিল তার অবসরকালীন ভাতা।
তবে তার ফাঁসি কেউ আটকাতে পারেনি। তার দেহ গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিল।
তিনি শহীদ হয়েছিলেন কিনা জানিনা, কোন ফাঁসুড়ে তার পাশে ছিল কিনা তাও জানিনা। তবে রাষ্ট্রীয় জল্লাদ এই ঘটনার অন্তরালে ছিল বলে জানা গিয়েছে। বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায় মহান শাসক তার বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছিল,অথচ অভিযোগকারীরাই
তার হাতে শিক্ষারত্ন তুলে দিয়েছিল।
১৬ই আগস্ট মঙ্গলবার,তখন স্বাধীনতার বয়স ৭৬ বছর ১ দিন।
তার স্থিরদেহটি অর্ধনমিত পতাকার মতো ঝুলছিল। আগের দিন ঘর ঘর তিরঙ্গা– এই স্লোগান আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলেছিল।
আমার মাস্টারমশাই বাবা দেশ স্বাধীনতা হবার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল আর এই মাস্টারমশাই স্বাধীনতার প্লাটিনাম জুবিলিতে গলায় ফাঁস দিয়ে দড়িতে ঝুলছিল!