অবতক খবর,৯ ডিসেম্বর: একেতেই রবিবার তার ওপর রাত ন’টা স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় অভিভাবকদের। প্রচন্ড শীতে যখন পথের সার মেয়রাও আস্তানা থেকে বের হচ্ছে না তখন অভিভাবকরা কেউ খাচ্ছেন রাতের টিফিন কেউবা সময় কাটাতে মোবাইল হাতে ব্যস্ত কেউ ফোন করে খবর নিচ্ছেন পরিবার সদস্যদের খাওয়া-দাওয়া হয়েছে কিনা! ভালো বিদ্যালয়ে ভর্তি করে মেয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে দু এক জন নয় ৭৭ জন অভিভাবক নিশি যাপন করবেন তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। শুধু রবিবার নয়, সোমবারও সারাদিনের পর রাতও কাটাবেন এখানে তারপর সোমবার সকাল বেলায় ফর্ম নিয়ে মেয়ের ভর্তি নিশ্চিত করে তবেই যাবেন বাড়ি। যদিও সেই ফরম পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকতে হবে ৪৮ ঘণ্টা।

ভালো স্কুলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার কত হ্যাপা বাবা মায়ের ! পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ফরম দেওয়া হবে মঙ্গলবার সকাল এগারোটা থেকে। তার ৪৮ ঘন্টা আগে থেকেই স্কুল গেটের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকরা। শান্তিপুর রাধারানি নারী শিক্ষামন্দির উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গেটের সামনে এমন দৃশ্য দেখা গেল । সকাল থেকে বাড়তে বাড়তে রবিবার রাত নটা পর্যন্ত ৭৭ জন ছাত্রীর অভিভাবক জড়ো হয়েছেন স্কুল গেটে। শান্তিপুর শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই স্কুলটি। বেশ পুরনো। ১৯৩৪ সালে শুরু হয়েছিল। তবে অতীতে কখনো দেখা যায়নি এমন দৃশ্য বছর তিনেক হলো, সারা শান্তিপুরের বিভিন্ন প্রান্তের অভিভাবকদের পছন্দের ফলে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির প্রাণ ওষ্টাগত।

কঠিন শীতে সারারাত স্কুলের বাইরে মহিলাদের রাত কাটানো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে উঠেছিল ঝড় তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মহানুভবতায় গত বছর থেকে দরজা খুলে দিয়ে মিড ডে মিলের টিনের চালায় বসতে দেওয়া হয়েছে তাদের।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তপতী মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন , পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুলে ২০০ জনকে ভর্তি নেবো আমরা। মঙ্গলবার ২০০ টি ফরম-ই দেওয়া হবে।ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে কমন বিষয় গুলোর বাইরে এডুকেশন , নিউট্রিশন ইত্যাদিও আছে। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ছাত্রী ও অভিভাবকের পছন্দের স্কুল হলেও স্কুলে আমাদেরও কিছু সমস্যা আছে। সেটা শিক্ষক শিক্ষিকার ঘাটতি। তবু আমরা বাড়তি পরিশ্রম করে স্কুলের সার্বিক নাম, সম্মান অটুট রাখার চেষ্টা করি সব সময়।

খুব ভালো স্কুল বলে কি এতো চাপ ? এক অভিভাবক বলেন, পড়াশোনাটা তো ভালো হয়ই , তাছাড়া উচ্চমাধ্যমিকে কিছু ভালো বিষয়ও আছে, যেগুলো অন্য স্কুলে নেই। মেয়েকে একবার ফাইভে ভর্তি করতে পারলে একদম বারো ক্লাস পর্যন্ত আর চিন্তা করতে হবে না। তবে সন্তানের জন্য রাস্তায় রাত কাটানো প্রসঙ্গে তারা অবশ্য স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ে তাদের বলেননি কিন্তু মোবাইলে স্কুলের তরফ থেকে ভর্তির নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই তাদের মনে হয়েছে আসন সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি আগ্রহীর সংখ্যা।

জানা গিয়েছে শহর প্রান্তের সূত্রাগড় থেকেও এই স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করতে চান অভিভাবকরা। সূত্রাগড়ে ভালো স্কুল রয়েছে বালিকাদের জন্যই। তবুও এখানে ভর্তির সুযোগ পাওয়াকে আগে গুরুত্ব দেন তারা।
তবে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ফর্মের সংখ্যা বাড়িয়ে অর্ধেক মেধা পরীক্ষা এবং বাকি অর্ধেক লটারির মাধ্যমে করার প্রস্তাব এসেছে অভিভাবকদের কাছ থেকেই যা নিয়ে আগামীতে আলোচনা হবে কমিটিতে এমনটাই বিদ্যালয় সূত্রে খবর । অভিভাবকদের সাথে আলোচনায় হয়তো এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়তো আর ঘটবে না।