অবতক খবর,৮ ফেব্রুয়ারি: আজ বীজপুরের মানুষ সুরক্ষিত নয়। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগেই পার্শ্ববর্তী বিধানসভার বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম কাঁচরাপাড়ায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এখানে অর্থাৎ কাঁচরাপাড়ায় নাকি একসময় সন্ত্রাস হয়েছিল। সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। এতদিন সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যের পরেই যেন বীজপুর জুড়ে নেমে এসেছে আতঙ্ক। কোন মন্ত্রবলে এই সকল ঘটনা ঘটছে তা সকলের অজানা। প্রায়দিনই শোনা যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছে। ২০১৯-এর আগে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল তাঁরা আবার বর্তমান নেতৃত্বদের হাত ধরেই দলে যোগদান করে, যারা কাঁচরাপাড়া বিবেকানন্দ মার্কেটে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিল এবং ২০১৯ এ যারা তাণ্ডব করেছিল এবং তাদের মধ্যেই আবার ২০২১ এ ঘর ছাড়া ছিল। বিধায়ক সুবোধ অধিকারী জেতার পর বলা হয়েছিল ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা দেখবে,তারাই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পুরনো চিত্রই ফিরে আসে।
তবে কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীরা,বর্তমানে আতঙ্কে ভুগছেন। কখনো ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে আবার কখনো ব্যবসায়ীদের মারধর করা হচ্ছে, কখনো ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা চাওয়া হচ্ছে, আবার কখনো ব্যবসায়ীদের ডেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এখানে এসে বলেছেন যে ,এই অঞ্চলে শান্তির পরিবেশ বজায় রয়েছে। কিন্তু তাঁর এমন মন্তব্যের পরই দেখা যায় আতঙ্কের পরিবেশ।
আপনাদের জানিয়ে রাখি, কাঁচরাপাড়া বিবেকানন্দ মার্কেটের একজন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যবসায়ীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ থেকে শুরু করে তার উপর চড়াও হয় কিছু দুষ্কৃতীরা। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তিনি ফোনে সমস্ত কিছু আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “খবর করার দরকার নেই, কারণ এরা লুম্পেন, সবসময়ই তাদের কেউ না কেউ আশ্রয় দিচ্ছে। কার কাছে যাবো? কার কাছে অভিযোগ জানাবো? এরাই তো ঘরছাড়া ছিল, তারপর কিছু নেতারা এদেরকে ডেকে এদেরকেই দায়িত্ব দিয়ে দিল। সকলেই জানে কারা তান্ডব করেছিল এবং কারা ঘরছাড়া ছিল।”
কাঁচরাপাড়া শহরের ব্যবসায়ী তপন রায়। তিনি আজ একটি বিবাদে পড়ে গেলেন। তাঁকে আজ বিবেকানন্দ মার্কেটে ডেকে এনে ব্যাপক মারধর করা হয়। কারা মারল? একসময় যারা সন্ত্রাস করেছিল তারাই এখন তৃণমূলের ঢুকে ফের সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে,তাহলে এর দায় কার? নেতাদের দোষ নাকি এই সাধারণ ব্যবসায়ীর দোষ? সাধারণ ব্যবসায়ীরা তো সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে চাইছে। কিন্তু আজ যে ঘটনা ঘটল,তাতে কলঙ্কিত হচ্ছে কাঁচরাপাড়া শহর,কলঙ্কিত হচ্ছেন এখানকার নেতৃত্বরা। তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে কেন? যা ঘটছে তা কি ঠিক? প্রশ্ন তুলেছে ব্যবসায়ী মহল। নেতৃত্বরা কি কিছুই জানেন না?
ঘটনা তো ঘটেই চলেছে।কবে যে এসব ঘটনা বন্ধ হবে তা কিছুই জানা যায়নি। তবে যে ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। তিনিও অনেক নেতৃত্বদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোন সুরাহা হলো না,অথচ যে কাউন্সিলরকে হেনস্থা করেছিল সে-ই ক্ষমতায় আছে এবং তান্ডব চালাচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কিছু করারও নেই,কারণ তাদের ব্যবসা করতেই হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন,”কোন অঘটন ঘটলে তাদের কিছু হবেনা,না খেয়ে মরবে আমাদের পরিবার। তাই আমরা চুপচাপ সব মেনে নিই।” এই তো কাঁচরাপাড়ার অবস্থা।
তবে এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে শ্যামল এবং পোকা নামক জনৈক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই শ্যামলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিলরদের হেনস্থা থেকে শুরু করে টোটো চালকদের মারধর, ব্যবসায়ীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দেওয়া ইত্যাদি। তবে সে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে রেখেছে যে, আশেপাশের ব্যবসায়ীরাও মুখ খোলেন না।
তবে বিষয়টি নিয়ে তারা হয়তো বিধায়ক এবং চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছেন না,অভিযুক্তরা যেহেতু সবসময় তাঁদের কাছাকাছি থাকেন সেই কারণে। তবে তারা বিধায়ক এবং চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করেছেন,তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেন,যাতে ব্যবসায়ীরা আগামীদিনে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারেন।