আজ সূর্য ওঠার দিন
নিশ্চিত ভুলে গেছেন এই মহান শিক্ষক ব্যক্তিত্বের কথা যার একহাতে ছিল মানুষ গড়ার চক ডাস্টার অন্য হাতে ছিল পরাধীনতা থেকে মুক্তির রাইফেল
শিক্ষক দিবস কাকে বলে?
তমাল সাহা
শিক্ষক তো দুনিয়া জুড়ে ছড়ানো ছিটোনো।
কেউ গবেষক অধ্যাপক, সমালোচক, ডি.লিট!
কতসব গবেষণাপত্র-সন্দর্ভ, অর্থনীতি সাহিত্য বিষয়ে প্রাজ্ঞজন, নাট্য চলচ্চিত্র চিত্রশিল্প বিশারদ।
সবাই শিক্ষক— সবাই বৌদ্ধিক চিন্তক।
কিন্তু দুনিয়া কাঁপানো সেই মানুষটি
যিনি জীবনের গণিত শেখাতেন অঙ্কের ক্লাসে সেই সমস্ত রক্ত-অগ্নিক্ষরা দিনগুলিতে
তাঁর মাথার দাম হয়েছিল ১০ হাজার টাকা,
এমন কোন দ্বিতীয় শিক্ষকের সন্ধান পাইনি আমি।
তিনি জেলখাটাকে জলভাত মনে করতেন।
যিনি দুর্দান্ত এক অগ্নিবলয় হয়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতেন সেই শিক্ষকটি যখন তখন ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মবেশে কখনো চাষাভুষো, কখনো পুরোহিত বা মৌলভী অথবা চাওয়ালা, কখনো বাড়ির চাকর সেজে গল্প করতে করতে রাষ্ট্রীয় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেমালুম বেরিয়ে যেতে পারতেন,
এমন বিরল শিক্ষক শুধু এই পলল ভূমেই সম্ভব।
শিক্ষক পুঁথিপড়া মানুষ। শিক্ষক শিক্ষকই।
যে শিক্ষক অস্ত্রগুরু হয়ে অস্ত্রাগার লুট করতেন, ডাকাতি করতেন, গেরিলা যুদ্ধ শেখাতেন তাকে কি বলবেন আপনি?
এমন শিক্ষক বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নোনা বায়ুর জল আবহাওয়ায় দ্বিতীয়জনকে খুঁজে পাবেন আপনি?
কল্পনা-প্রীতিলতার মতো দুর্দান্ত দুর্ধর্ষ দুটি মেয়েকে যিনি যথার্থ বীরাঙ্গনা নারীতে রূপান্তরিত করলেন আর যিনি বঙ্গীয় গার্হস্থ্য উদ্যানে সমস্ত নারীদের ভালবাসার পুরুষ হয়ে উঠলেন তাকে আপনি কোন শিক্ষকের সমগোত্রীয় করবেন, তাকে আপনি নির্দিষ্ট কোন্ বিদ্যাশাস্ত্রের স্পেশালাইজড শিক্ষক বলবেন?
টিউশন মার্কা স্পেশালাইজড শিক্ষক ছাত্র পড়িয়ে অতিরিক্ত উপার্জনে অর্থশিল্পে এগিয়ে থাকা সওদাগরি শিক্ষক বলবেন, না অন্য কিছু তা ভাবতে থাকুন!
শুধু সূর্য সেনের নামই হতে পারে মাস্টার দা!
একটি লম্বমান কাছির মতো মোটা দড়ি ঝুলছে তোমার চোখের সামনে, তার আগেই তোমার দাঁত নখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে কিন্তু তোমাকে নিরস্ত করা যায় নি
তুমি স্বপ্ন লিখছো মাস্টারদা! এমনভাবে স্বপ্ন লেখা যায়?
চট্টগ্রাম ইস্টার বিদ্রোহের কথা কোনদিনও ভুলে যেও না, ভুলে যেও না জালালাবাদ জুলখা চন্দননগর ধলঘাটের সংগ্রামের কথা। সবসময় মনে রেখো, ঐক্যই বড়।
হতাশ হয়ো না। অন্ধকার দূরে সরে যাচ্ছে। ওই দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতার নবারুণ— আমার স্বপ্ন।
একহাতে চক ডাস্টার। অন্য হাতের রাইফেলটি পাশে রাখলেন মাস্টারদা।
ব্ল্যাক বোর্ডে জীবনের অঙ্ক বিশাল ক্যালকুলাসটি নিয়ে এখনো কাজ করে চলেছেন মাস্টার দা।
মহান শিক্ষকের মহান কর্মকাণ্ডটিতে তিনি এখনো নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।
ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি দীর্ঘজীবী হোক!
মহান শিক্ষক মাস্টারদা জিন্দাবাদ!