অতীতের স্মৃতি: কে ভুলতে পারি এই পদযাত্রা!
এ কি শবযাত্রা, মিছিল, পদযাত্রা! কে জানে? কলকাতা দেখলো,দেখালো আমাদের ১ জানুয়ারি’১৯
শবযাত্রা নয়:অনন্য পদযাত্রা
তমাল সাহা
আমার এই প্রৌঢ় বিকেলে
আমি যে হেঁটে চললাম
মনে হলো এ এক অনন্য পদযাত্রা—
যদিও এটি ছিল এক মহান শবযাত্রা,
তবুও তা বলবো না,বলবো শেষযাত্রা।
রাজার রাজত্ব আছে
কিন্তু রাজকীয় হুল্লোড় নেই।
নেই পাইক,বরকন্দাজ সিপাহশালার,
মোসাহেবদের মাতব্বরি।
ক্ষমতাকে ঠুঁটো জগন্নাথ
করে দিতে পারে কেবলমাত্র
এমন একটি শান্ত নীরব মৌন মিছিল,যা জীবনের প্রান্তিক বেলায় অভিজ্ঞতার আলোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
মরদেহ রবীন্দ্রসদনে শায়িত রাখলে
সে নাকি ফুলের গন্ধে ভূত হয়ে যায়
আর সে ঘাড় মটকানোর স্বভাব পেয়ে বসে—
এমনটাই নাকি সে বলে গিয়েছিল
প্রিয় প্রজন্মের কাছে।
মিছিলেই আমি ভাবতে থাকি,
এর কারণ খুঁজি,
খুঁজি এই কথার সারবত্তা।
সে তো জানতো রাষ্ট্রের
স্বভাবিক স্বভাবের কথা—
রাষ্ট্রের ধর্মই ঘাড় মটকানো।
রবীন্দ্রসদনে শয়ান মানেই রাষ্ট্রের হাত।
আর রাষ্ট্রের হাতের ছোঁয়া লাগলেই
শব হয়ে উঠবে অশরীরি ভূত!
পেয়ে যাবে
রাষ্ট্রর মতো ঘাড় মটকানোর স্বভাব—
তা সে অনেক অনেক আগেই জেনে গিয়েছিল।
মিছিলে কারা হাঁটবে বা হাঁটবে না
তা তো আগেই জানতুম।
বেহায়ারা যতই দাড়িবান হোক
যেন নকল রবীন্দ্রনাথ
হাঁটার স্পর্ধা দেখাবে না—
ক্ষমতার পুরো স্বাদের তোফা
পেয়ে গিয়েছে তারা।
তবে কারা ছিল?
যাদের থাকার কথা ছিল তারাই ছিল—
এখনো মানুষ আছে,তাই
রৌদ্র ঝড় জল বৃষ্টি হয়
সূর্য চন্দ্র আকাশ উপুড় হয়ে থাকে
আমাদের দিকে।
হাঁটবে তো জনতা,
বিদায় সঙ্গীত গাইবে তো বিনম্র মানুষ!
কেওড়াতলা মহাশ্মশানে কর্কশ তোপধ্বনির গর্জনকে তুচ্ছ করে কারা যেন কন্ঠে তুলেছে সুর– ও আলোর পথযাত্রী/ এ যে রাত্রি…
তার মরদেহের উপরে
ছিল না একটিও ফুলের পাপড়ি।
কারণ সে তো নিজেই ছিল
আগুনের ফুল।
সমাপ্তিতে আকাশে চেয়ে দেখি
ফুটে উঠেছে অজস্র তারার ফুল।
ফুল আর ফুলকির নৈকট্য
আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়…