অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন
লতাজি কাঁচরাপাড়ায়। আজ লতাজির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
এই জনপদে তুমি এসেছিলে—
সাত মার্চ উনিশশো ছিয়াশি।
চলে যাও তুমি কোন সুরলোকে,
আমরা যে তোমায় বড় ভালোবাসি।
ঐতিহাসিক স্পলল্ডিং ময়দান, এখানে আমরা শুনতে পেয়েছিলাম লতাজির গান।
তমাল সাহা
আজ ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রী পঞ্চমী শেষ। বীণাপাণি হাতে সুরের দেবী সরস্বতীর আজ বিসর্জনের দিন।আজ সকালেই প্রয়াত হলেন সুরের সরস্বতী,ভারতের কোকিল কন্ঠী লতা মঙ্গেশকর।
স্মৃতি ধূসর হতে পারে, ইতিহাস চিরজীবী থাকে।
বেলা ১১টা থেকে শুরু শ্রোতা না দর্শক, কারা দ্রুত বেগে আসছে! জন প্লাবন কাকে বলে? মানুষ আসছে আর ইতিহাস লেখা হচ্ছে। একটার পর একটা দ্রুত অক্ষর বসে যাচ্ছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।
লালগোলা থেকে শুরু করে শিয়ালদহ,কোন স্টেশন বাদ দেবো! ওপারে হুগলি, চুঁচুড়া, ত্রিবেণী। স্থানীয় ভূগোল পেরিয়ে ইতিহাস গড়ে উঠছে কাঁচরাপাড়ায়।
একটাই তো ধ্বনি,আরে লতাজি আসছে!
লতা আর তখন কোথায়? লতা,সে তো মহীরুহ হয়ে ডালপালা বিস্তার করেছে। তোমার সুরের ঝর্ণায়, গানের ছায়ায় বসবে মানুষজন।
লতার ফাংশন সেই বার্তা রটে গেছে কবেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে। কোথায় ফাংশান? স্পল্ডিং ইনস্টিটিউটে, কাঁচরাপাড়ায়।
ময়দানে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা। গেট থেকে তিনটি স্তর পেরিয়ে ঢুকতে হচ্ছে মূল অনুষ্ঠান স্থলে।
শুধু কি লতা! লতা তো কেন্দ্রে। পরিধি ঘিরে আছে আরও সব নামজাদা বোম্বাই ঘরানার শিল্পী ঊষা মঙ্গেশকার সাবির কুমার, রবীন্দ্র জৈন, শৈলন্দ্র সিং, সুরেশ ওয়াদেকার।
কি গান গিয়েছিলেন তিনি? কত সে সব গান? ‘তোমাদের গানের আসরে আজ এই তো প্রথম গাইতে এলাম। বিনিময়ে চাই তোমাদের প্রশংসা আর ভালোবাসা।’
‘আমার কথা শিশির ধোয়া হাস্নুহানার কলি’,সেসব কত গান!
সে তো গানের পর গান। সুরের সরস্বতী ভারতের কোকিলকণ্ঠী তুমি।
কন্ঠে তোমার জাদু, সুরের মায়া।
আসলে তিনি ছিলেন সংগীত প্রিয় মানুষের হৃদয়ে। মজবুত আশ্রয় নির্মাণ করে নিয়েছিলেন অন্তঃস্থলে। ফাংশন শেষ।
এতো গানের পরেও তিনি বলেন, আর কোন গান শুনতে চান?
মৃণাল সিংহরায় তখনও মঞ্চে ওঠেন নি। চিরকুট লিখে পাঠালেন, একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি। স্পলডিং ময়দান হয়ে উঠল ক্ষুদিরামময়!
গান সমাপ্তিতে মঞ্চে উঠে এলেন মৃণাল সিংহরায়।
লতাজি তাকে অত্যন্ত নিকটে করে নিলেন।
লতাজিকে এক দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি সেদিন। নবীন প্রজন্মদের শ্রোতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে লাইম লাইটে তুলে আনেন।
গান্ধীজী এই ময়দানে এসেছিলেন দাঙ্গা বিধ্বস্ত কাঁচরাপাড়ায় আয়োজিত শান্তিসভায় বক্তব্য রাখতে ১৯ আগস্ট ১৯৪৭ সালে। মহানায়ক উত্তমকুমার এসেছিলেন ১৯ মার্চ,১৯৭৬। লতাজি এলেন,৭ মার্চ ১৯৮৬। তৃতীয়বার ঐতিহাসিক হয়ে গেল এই স্পলডিং ময়দান।
এখনো কি সেখানে বাতাসে ভাসে লতাকন্ঠের গান!
ছবিঃ লতা মঙ্গেশকর ও সাবির কুমারের সঙ্গে মৃণাল সিংহরায় আর তার সহচর মুকুল রায়, নিখিল বিশ্বাস(কালু), দীপন দত্ত, গৌতম ঘোষ।