অবতক খবর,২ জানুয়ারি: পৌষ মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবারে ঘোষগ্রামের লক্ষ্মী মন্দির লাগোয়া কড়ির মেলায় উপচে পড়ল ভিড়। এই গ্রামের আরাধ্যাদেবী মা লক্ষ্মী। আর এই উপলক্ষ্যে লক্ষ্মী মন্দিরকে ঘিরে পৌষ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবারে গ্রামে বসে কড়ির মেলা। বীরভূম ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এই মেলায় কড়ি সংগ্রহ করতে জমায়েত হয়েছেন বিভিন্ন মানুষ।

প্রাচীনকালে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল কড়ি, পরবর্তীতে মুদ্রা ও টাকার প্রচলন হলেও প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে ময়ূরেশ্বরের ঘোষগ্রাম। লক্ষ্মীমাতা সেবাইত সঙ্ঘের আহ্বায়ক গুরুসরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগে কড়ির বিনিময়ে ধান কেনাবেচা চলত। টাকা পয়সা চালু হওয়ার পর কড়ি বিলুপ্তির পথে। তাই কড়িকে বাঁচিয়ে রাখতে বহুবছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। যতদিন যাচ্ছে এই মেলা ততই প্রসিদ্ধ হচ্ছে। লক্ষ্মীর গ্রাম হিসাবে পরিচিত ঘোষগ্রাম।

কথিত আছে, হর্ষবর্ধনের আমলে পরিব্রাজক সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী পরিভ্রমণ করেছিলেন মায়ের সাধনার সন্ধানে। বীরভূমের রাঢ় অঞ্চল ঘুরতে ঘুরতে তিনি ঘোষগ্রামে এসে পৌঁছন। সেখানে তিনি স্বপ্ন দেখেন ক্রেতাযুগে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমান বসবাসের জন্য কিছুদিন এই গ্রামে বিচরণ করে গিয়েছেন। আবার দুর্যোধনের চক্রান্তের শিকার হয়ে পান্ডবরা কিছুদিন এই এলাকায় অজ্ঞাতবাসে ছিলেন। সাধনার উপযুক্ত স্থল হিসাবে এই গ্রামের একটি নিম গাছের তলাতে তিনি সাধনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রাম লাগোয়া কাঁদর থেকে শ্বেতপদ্ম ও একটি কাঠের খণ্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গামাটির প্রলেপ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেন।

সেই থেকে আরাধ্যদেবী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন মা লক্ষ্মী। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ও পৌষ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার এই মন্দিরকে ঘিরে বসে মেলা। তবে এই কড়ির মেলার বৈশিষ্ট্যই আলাদা। এই মেলায় অধিকাংশ দোকানদার দুধ কড়ি, ফুল কড়ি, তিল কড়ি, বুজ কড়ি ও স্নোত কড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের কড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মেলা চলে।

জনশ্রুতি আছে, কড়ি মায়ের চরণে ছুঁইয়ে বাড়িতে রাখলে অভাব দূর হয়। বীরভূমের কোটাসুর থেকে আসা সুব্রত দাস, দেখুড়িয়া থেকে আগত বিভা মন্ডল, মুর্শিদাবাদের কাঁদি থেকে আগত ববিতা দাস সহ একাধিক দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন “পুজোর ডালা সাজিয়ে মায়ের চরণে নিবেদন করলাম, ঠিক তার পাশাপাশি কড়ি সংগ্রহ করলাম বাড়ির পুজোর জন্য। “