রেড রোডে এবার ১৬ লক্ষের দুর্গাঃ স্বাধীনতার প্লাটিনাম জুবিলী

তমাল সাহা

রেড রোড,লাল রাস্তা। সেখানে এবার মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। ১৬ লক্ষের দুর্গা,ভাবা যায়? শারদ বাতাসে মণ্ডপে মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমার অধিষ্ঠান হওয়ার আগেই ১৬ লক্ষের দুর্গা, রেড রোডে প্যারেড করবে।

এটা কি শেষ পর্যন্ত রেড রোডে লং মার্চের প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে? এই ঘটনা কি বলতে চায়? এটা কি ধর্মীয় জাগরণের বিস্তার ঘটাতে চাইছে?

‘তুমি ভারতবর্ষের সুপরিচিত সাম্প্রদায়িক দল হলেও আমি রাজ্যে তোমাকে ধর্মীয় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি।

আমার দুর্গা ভক্তি ও হিন্দুত্বে বিশ্বাস কম যায় না। আমি ইতিমধ্যেই লক্ষ্মীকে অনেক সস্তা দাম মাত্র ৫০০ করে দিয়েছি। মূল্য খয়রাতি ৫০০ টাকা করে দিয়েছি। লক্ষ্মীরা ধর্ষিতা হলে তাদের ধর্ষণ মূল্য দিচ্ছি।’ এমন বার্তা কি দিতে চাইছে শাসক?লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কাছে এখন বাংলার লক্ষ্মীরা হাত পেতে ভিক্ষে চাইছে– রাষ্ট্রীয় ভিক্ষা। যদিও এই ভিক্ষা,এটা রাষ্ট্রের কোনো অর্থ নয়। জন কোষাগার থেকে দেওয়া হচ্ছে এই খয়রাতি দান। শাসক কি চাইছে প্রজারা ভিক্ষাবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ুক?

প্রকৃতপক্ষে দুটি দলই রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত। ধর্মীয় উস্কানিকে পণ্য করে ক্ষমতায়ন চায়। একে অপরের পরিপূরক নয়, এই দুটি দল পরস্পর সম্পৃক্ত– তা প্রমাণিত। দল বদল করে মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায়, বিরোধী দলের বিধায়ক হলেও অন্য দলের জেলা সভাপতি হওয়া যায়,এই সমস্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই রাজ্য।

এবার স্বাধীনতার প্লাটিনাম জুবিলী,৭৫ বছর। সেই উৎসব পালনে রেড রোডে হবে দুর্গানৃত্য। কেন গম্ভীরা বা ছৌ লোকনৃত্য নয়? কেনো, অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত অভীদের প্রদর্শনী নয়? ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকী প্রীতিলতা কল্পনা বীণার প্রদর্শনী নয়?

হাঃ হাঃ ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতবর্ষহ! বাংলার স্বাধীনতা থিম ‘বাংলার গর্ব দুর্গা মা’। রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই দুর্গার জন্য ব্যয় হবে ১৬ লক্ষ ১ হাজার ৬০০ টাকা। এদিকে কোষাগার ফাঁকা, এ কথা নিজের মুখেই বলছেন এই তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ংঋ তিনিও প্রায় দশভূজা। তার বিভিন্ন হাতে রয়েছে বিভিন্ন দপ্তর। দুর্গাপুজো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়ে গিয়েছে। তারই ‘অনুপ্রেরণায়’ এই সম্মানকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে।

দুটি দলই রামনবমীতে আছে, হনুমান জয়ন্তীতে আছে। আরো সব কত ধর্মীয় উৎসব তাতে আছে, সঙ্গে আছে অস্ত্র মিছিল।

বঙ্কিমচন্দ্র দুর্গাকে শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখেছিলেন আনন্দমঠে। মা কি ছিলেন, কি হইয়াছেন, কি হইবেন! দুর্গার হাতে দশাস্ত্রস। অগ্নিযুগের বিপ্লবীরাও দুর্গাপুজো করতেন। আগামীর সশস্ত্র ব্যঞ্জনা এতে লুকিয়ে আছে কিনা কে বলতে পারে? এই ধর্মীয় লড়াইকে, সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণ লড়াইকে কারা নিয়ে যেতে পারে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সশস্ত্র লড়াইয়ের দিকে, কে জান?

আপাতত এই স্লোগান প্রযোজ্য বোধ করি, প্যারাডে দুর্গা / জনগণ মুর্গিমুর্গা।