আজ নাট্যাচার্য শম্ভু মিত্রের প্রয়াণ দিবস

রক্তকরবীর রাজা কাঁচরাপাড়ায় এসেছিল
তমাল সাহা

সে জন্মেছিল, নাটকের মত সেসব দুরন্ত নাটক করেছিল মানে বিভিন্ন বৈচিত্র্যে ও মাত্রায় সংলাপ প্রক্ষপণ করেছিল। সেই শব্দ প্রথমকে প্রক্ষেপণকে আরো বিস্তৃত করতে সে কোনোদিন শ্রমিক অধ্যুষিত এই মাটিতে এসেছিল। আমরাও তাকে দেখেছিলাম। এটাই আমাদের পরমপ্রাপ্তি।

শম্ভু শব্দের ব্যাপকতা কে না জানে! মিত্র বলতে কী
বোঝায় এটাও না বোঝার কথা নয়। নাটক নির্মাণ কারিগরি এবং মঞ্চে সে যুগান্তকারী কুশীলব এটা কে অস্বীকার করতে পারে?

শ্রীরঙ্গম ও শিশির ভাদুড়ি নাম দুটি শুনেছি। তাঁর সঙ্গে শম্ভু মিত্রের সংযোগ ছিল। তারপর নবনাট্য আন্দোলন, নবান্ন-র পরিচালনা, বিজন ভট্টাচার্য ও তার যৌথ অভিনয়– এসব অনেক পরে আমরা পড়ে জেনেছি।

রক্তকরবী মানেই শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্রের সংলাপ। রবীন্দ্রনাথের নাটক মানেই যেন শম্ভু মিত্র। তখন তো বাতাসে এমনই রব ছিল। মধুবংশীর গলি-তে শুধু যেন শম্ভু মিত্রের অধিকার!

আমরা দেখলাম তার চার অধ্যায়, রাজা অয়াদিপাউস, পুতুল খেলা ,দশচক্র গ্যালিলিও।
আমাদের সে সময়ে সে এক লড়াই বটে! শম্ভু মিত্র বড়, না উৎপল দত্ত। জব্বর বিতর্ক– এ নিয়েও রকে আড্ডা দেওয়া যায় ।এমন ছিল ৭০ দশকের সেই সময়।

আমি আর কাজল তখন জিগরি দোস্ত। কাজল সুর আবৃত্তিকার। এখনকার সংজ্ঞায়নে বাচিক শিল্পী। সে এখন বিশাল মাপের মানুষ। আমরা দুজন নাটক দেখে বেড়াতাম। তার সিনেমা ও দেখেছি ধরতি কি লাল, জাগতে রহো, মানিক ।

চম্পক নগরের চন্দ্রনাথ বণিক। চাঁদ বণিকের পালা। চাঁদ সওদাগর। সে
কিসের সওদা করে কে জানে? হাঁক ছেড়েছিল, হৈ ঈ ঈ য়াঃ! কত বাঁও জল দেখ, তল নাই। … পাড়ি দেও।

জীবনের অন্তিমেও সে নির্জনে নাটক করেছিল। সিরিটি শ্মশানের চিতার আগুন সেই সংলাপ শুনেছিল কিনা জানিনা, তবে আমরা কেউ শুনিনি।
সে বলেছিল, প্রস্তুত সবাই? পাড়ি দেও। শেষ পাড়িতে সে আমাদের কেন ডাকে নি জানিনা। অভিমান এক ধরনের বড় দুঃখ বোধ করি।

চার অধ্যায়ের অতীন, পুতুল খেলার পূর্ণেন্দু ,দশচক্রের তপন, অয়াদিপাউস একদিন রাজা হয়ে এসেছিল নন্দিনীকে নিয়ে রক্তকরবী ছিল তাঁর হাতে। এখানে এই কাঁচরাপাড়ার হাইস্কুলের মাঠে যুব গোষ্ঠীর আয়োজনে, ১৯৬৭ সালের কোনো এক দিনে।