যে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে
তমাল সাহা

মঙ্গলে ঊষা বুধে পা যথা খুশি তথা যা। সে চলে গেল কিন্তু সব সম্পদ আমাদের জন্য রেখে গেছে।

লিটিল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ চলে গেলেন। অনেক হতাশা অনেক দীর্ঘশ্বাস বিস্তৃত হবে এখন সাহিত্য চেতনার ঘরে। এ নিয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপালেও আমাদের চাবিটি থাকবে
প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেটি ঘরে।
কারণ আমাদের গোল্লাছুট তো বড় বড় নামজাদা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দিকে।

তুমি লিটিল ম্যাগাজিন করো,কত লিটিল ম্যাগাজিন আছে, অনেক অনেক তার সম্পাদক। তিনি সব সম্পাদকের সম্পাদক। কারণ সব নীতির ,সব আদর্শের ম্যাগাজিন ভরাট করে আছে তার সদরদপ্তর।

কবে কোথায় কোন লিটিল ম্যাগাজিন বেরিয়েছিল সবই তিনি জানতেন। ন্যাশনাল লাইব্রেরি সে তো অনেক বড় কথা! তার পরিচালনায় বৃহৎ বৃহৎ মানুষ। সে তো বিশাল জাতীয় ব্যাপার কিন্তু একটি ছোট মাপের মানুষ, একটি সংগ্রহশালা কিভাবে হয়ে ওঠে গবেষণার কেন্দ্র! শুধু লিটিল ম্যাগাজিন নিয়ে তার বৈভব সম্পদ। অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের ব্যাপ্তি না থাকলে কিভাবে এটা সম্ভব?
তার সংগ্রহশালায় ছোট বড় বই ঘুরে ফিরে দেখা এও জীবনের এক অভিজ্ঞতা।

আশির দশক বোধকরি ১৯৭৮ সালে যাত্রা। সাহিত্য চেতনার এইসব সম্পদ, সাহিত্য আন্দোলনের বিচিত্র উপাদান উপকরণ সারি সারি সাজানো আছে বইয়ের তাকে তাকে।
বঙ্কিমচন্দ্রের কাল থেকে অথবা তারও আগে থেকে কত কী সংগ্রহ তার! এমন উদগ্রীব এমন ব্যগ্র মানুষ দুর্লভ বড়– অদ্বিতীয়।

হয়তো বা অনেকে সাদরে তাদের ম্যাগাজিন পাঠিয়েছেন তার সংগ্রহশালায় কিন্তু লিটিল ম্যাগাজিন ক্রয় করা ছিল তার অহংকার এবং সংগ্রহ করা ছিল তার নিজস্ব দায়।
সাহিত্য আন্দোলনে তার ভূমিকা, তার কী কোনো পরিমাপ করা যাবে?

টেমার লেনে এখন নিরুদ্দেশের হাওয়া!
তাকিয়ে থাকি সংগ্রহশালাটির দিকে। এবার বাংলাদেশের একুশের বইমেলায় মেতেছি আড্ডায় কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাদের সাহিত্য শিবিরেঋ দেখেছি আমার চেয়েও তারা সন্দীপ দত্তকে বেশি জানে, বেশি চেনে।কত মানুষ এসেছিল, কত মানুষ আসে এই সংগ্রহ দপ্তরে। সাহিত্যের কত প্রত্নতত্ত্ব সঞ্চিত আছে তার এই আলিবাবার গুহায়!
এইভাবে একক ব্যক্তিত্ব একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়।

এভাবেও সাহিত্যের কাজ করা যায়! সন্দীপ দত্ত এখানে ছিলেন, এখন তিনি কোথায়?

লিটিল ম্যাগাজিন সংরক্ষণের মহাফেজখানা ও লড়াই আজ ইতিহাস হয়ে গেল!