অবতক খবর ::    গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবারের প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে শেষকৃত্যের জন্য ওই পরিবারের ত্রাতা হয়ে ওই পরিবারের পাশে থেকে সৎকারের ব্যবস্থা করল মুসলিমরাই। ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক-‌২ নম্বর ব্লকের পঞ্চনন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের লোয়াইটোলা গ্রামে।

মোথাবাড়ি থানার পঞ্চানন্দপুরের লোয়াইটোলা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। প্রায় ৫০০ মানুষের বাস। এর মধ্যে একটি মাত্র হিন্দু পরিবার। গত প্রায় ৩৫/৪০ বছর থেকে এই গ্রামে বাস করে আসছেন বিনয় সাহা(‌৮০)‌ ও পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে বিনয়বাবু বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার বিনয় সাহা মারা গেলে চরম সঙ্কটে পড়েন তাঁর ২ ছেলে কমল ও শ্যামল। রাতে লকডাউন ভেঙে কোনও আত্মীয়-স্বজন আসবে কিনা সে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। কীভাবে বাবার শেষকৃত্য করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তাঁরা।

এদিকে লকডাউন নিয়ে আত্মীয় স্বজনেরাও ছিল হাতে গোনা। ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন গ্রামের প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। মৃত বিনয় সাহার বাড়িতে ছুটে আসেন গ্রামের ১০ /১৫ জন মুসলিম যুবক। তাঁরা বাঁশের ঝাড় থেকে বাঁশ এনে শবদেহ বহনের বাঁশের মাচা তৈরি করেন। তারপর সেটা রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়ে তোলেন এবং কাঁধে তুলে নিয়ে কার্যত পরিবারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। শেষকৃত্যের জন্য সাদুল্লাপুর শ্মশানে নিয়ে আসা হয় দেহ। গ্রামবাসীরা যে এত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন তা ভাবতেই পারেনি ২ ছেলে কমল ও শ্যামল। তাঁরা জানান, ‘‌আমরা বহু বছর থেকে এই গ্রামে বসবাস করে আসছি। আমার সব আপদে-বিপদে গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েন। লকডাউনের সময়ে বাবার মৃত্যু, তারমধ্যে কী করে শেষকৃত্য করা হবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। প্রতিবেশী মুসলিমরা এসে পাশে দাঁড়ান।

 

শবযাত্রায় পরিবারের সঙ্গে ছিলেন মুকুল শেখ, সাদ্দাম শেখ, রফিকুল ইসলাম, মোস্তাক সেখ, -‌সহ একাধিক যুবক। পঞ্চায়েত সদস্য সাদ্দাম শেখ জানান,‘‌লকডাউনের মুহূর্তে মৃত ব্যক্তির ২ ছেলে গভীর চিন্তায় ছিল। আমাদের মনে হয়েছে বিপদের সময় মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই শ্রেয়। তাই আমরা গ্রামবাসীরা হিন্দু পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।’‌

পঞ্চনন্দপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিজিয়া খাতুন বলেন, ‘‌পঞ্চানন্দপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য ভূমি। আমাদের এই এলাকায় আমরা সবাই হিন্দু মুসলমান একসাথে একে অপরের সুখে-দুখে এক ভাবে বেঁচে থাকে। এটাই আমাদের আদর্শ।’

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শক্তিপদ পাত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‌সম্প্রীতির অন্যন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মোথবাড়ি। আর এটাই আমাদের মালদা জেলা। বিপদের সময় আমরা কোনও ধর্ম দেখি না। সব ভেদাভেদ, শত্রুতা, ধর্মান্ধতা, রাজনীতিকে পেছনে ফেলে পাশে গিয়ে দাঁড়াই।’‌