বীজপুরের পটুয়াপাড়া
মাটির মানুষ, মাটির জীবনঃপর্ব-৬
তমাল সাহা
হায়! মা কি জানে? পৃথিবী দখল করেছে করোনা শয়তানে! — যাদব পাল
যাদব পাল। এই অঞ্চলের পুরনো মৃৎশিল্পী। তাঁর কাছে থেকে অনেক শিল্পীর হাতখড়ি হয়েছে। তাঁর কারখানার নামই যাদব পাল। আর কিছু নয়। বড় করে লেখা নামটুকুই যথেষ্ট।
যাদব পাল বলেন, আমাদের পদবী আর পাল নয়। পোড়া কপাল। কি রোগ যে এলো নাম তার করোনা। কি করব না? মূর্তি গড়ব না? প্রতিমা বানাবো না? আর শরৎকাল এলেই যে আমাদের হাত মাটি ছানবার জন্য উসখুস করে, আমরা তো মাটি আর মা ছাড়তে পারিনা।
আমি এত বছরেও বুঝিনা দেবের চেয়ে দেবীর দিকে আমাদের কেন এত চোরাটান। মায়ের মুখ আঁকা চক্ষুদান না করতে পারলে পাল হয়ে লাভ কি? লকডাউন! মাকে ডাউন করুক তো দেখি!
প্রতিমার গায়ে মাটির প্রলেপ দিতে দিতে তিনি বলেন,কম হোক বেশি হোক, ছোট হোক বড় হোক, মা তো আসছেই কৈলাস থেকে। করোনা কি উমাকে রুখতে পারবে? তার ওই দশ হাতের দশ অস্ত্রের সঙ্গে কি লড়তে পারবে?
জিগ্যেস করি, প্রতিমা কত গড়লেন এবার? মোট ৬০টি প্রতিমা। ৪০টি ছোট। বড় প্রতিমার বায়নাই হয়নি। মাজদিয়া, ফুলিয়া, শ্যামনগর থেকে কারিগররা আসে। রোজ দেবার দম ফুরিয়ে গেছে।
্
একপ্রস্ত টাকা নিয়ে চলে গেছে বড় প্রতিমার কারিগরেরা। লকডাউন! লকডাউন! লকডাউন! এ আশঙ্কায় ভয়ে তারা বাড়ি চলে গেছে। এখন কি করছে তাও জানিনা। লকডাউনে আসা-যাওয়া করবে কি করে? গাড়ি-ঘোড়া ট্রেন বন্ধ। যা মজুরি পাবে,তাতে পোষাবে না, কিন্তু আমার যা পুঁজি তাতে কি ওদের সেই মজুরি দিতে পারবো? কি করে দেব? কেমন করে দেব? এখন সাতজন কারিগর কাজ করছে। ছোট ঠাকুরের দামও পড়তির দিকে,যে ছোট প্রতিমা বিক্রি হয়েছে গতবছর ১৪ হাজার ১৫ হাজারে, তার দাম অর্ধেক হয়ে গেছে। পুজো ওয়ালাদের বাজেট কম। কি হবে কে জানে? হায়!পৃথিবী দখল করল করোনা শয়তানে, এই বলে একটা হতাশার শ্বাস ছাড়লেন যাদব পটুয়া।