অবতক খবর,১৯ সেপ্টেম্বর,অভিষেক দাস,মালদা:- মন্দির হোক বা বনেদি বাড়ির পুজো, যন্ত্রচালিত কৃত্রিম বাজনা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে মালদার ঢাকিদের। শুরু হচ্ছে পুজোর মরশুম। বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শুরু ঢাকিদের রোজগারের প্রথম সফর। তারপরেই রয়েছে গণেশ পুজো, দুর্গা পুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, কার্তিক পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো প্রমুখ ।

এই পুজোর উৎসব প্রায় দেড় মাস ধরে চলবে। কিন্তু এখন যত্রতত্র কৃত্রিম মেশিনেই কাসর ঘন্টা, ঢাকের বাজনা বেজে ওঠায় ধীরে ধীরে ঢাকিদের চাহিদা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। শরতের মরশুমে যেভাবে মালদার বিভিন্ন এলাকার ঢাকিদের মহড়া দিতে দেখা যেত। সেই আগ্রহ এখন আর অনেক ঢাকীদের মধ্যে দেখা যায় না। রোজগারের জন্য অনেকেই এই পেশা ছেড়ে ইতিমধ্যে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন।

পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এবং শহরে এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু ঢাকিদের পরিবার । এছাড়াও ইংরেজবাজার ব্লকের বাঁশবাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে অমৃতি, সাটটারি, নরহাট্টা সহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ঢাকিদের পরিবার। কিন্তু আজকের দিনে যন্ত্রচালিত কৃত্রিম বাজনার দাপটে সেই ঢাকিদের রুজি রোজগারে চরম ভাঁটা পড়েছে।

সাহাপুর গ্রামের এক ঢাঁকি অধীর সুকুল বলেন, একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন দোকানগুলিতে পুজোর মরশুমের আগে ঢাক সারাবার তোড়জোড় শুরু হত। এমনকি শরতের মরশুমে ভোর হতেই আমরা ঢাক বাজিয়ে মহড়া দিতে শুরু করতাম। কিন্তু এখন আর সেইসব নেই । বেশিরভাগ পুজা উদ্যোক্তারা কৃত্রিম বাজানার দিকে ঝুঁকছে । সারা বছর এই যন্ত্রচালিত বাজনাতেই বিভিন্ন মন্দির, বনেদি বাড়ির পুজা গুলি হচ্ছে । ফলে অধিকাংশ মাসের একপ্রকার রোজগার আমাদের হারাতে হয়েছে। এবারের পুজোর মরশুমে এখনো পর্যন্ত তেমনভাবে বায়না আসে নি। জানিনা কি হবে। কারণ, অনেকেই দেখছি যন্ত্রচালিত কৃত্রিম বাজনা কিনে ঢাক, কাঁসর ঘণ্টার চাহিদা পূরণ করছে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে এই শিল্প আর টিকে থাকবে না। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখছি যাতে ঢাকি সহ বাদ্যযন্ত্র সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

পুরাতন মালদার অপর দুই বাদ্যকর গোপাল রবিদাস, নৃপেন রবিদাসদের বক্তব্য , ঢাক বাজানোর পাশাপাশি নিজেদের দোকানে নিজেদের দোকানে সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র মেরামতি করতাম। তাতে বেশ ভালো রুজি রোজগার হতো। এখন আর সেইসব নেই। ঢাকিরাও আসে না , রোজগারের পালা উঠে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখছি যন্ত্রচালিত বাজনাতেই অনেকেই পুজোর চাহিদা মেটাচ্ছে। কিন্তু নিজেদের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অন্যরকমই আকর্ষণ রয়েছে। যতই কৃত্রিম বাদ্যযন্ত্র তৈরি হোক না কেন , ঢাক, কাঁসর ঘন্টার প্রকৃত আওয়াজ কোনভাবেই কেউ পূরণ করতে পারবে না। আর কিছুদিন পরেই দুর্গা পুজোর মরশুম। এখনো কোনোরকম বায়না আসে নি। জানিনা এবছর কি হবে। রাজ্য সরকারের কাছে আমরা আবেদন রাখছি, যাতে আমাদের মতো বাদ্যকারদের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়।