উৎপল রায় :: অবতক খবর :: জলপাইগুড়ি :: মংলাকান্ত রায়ের নিত্যসঙ্গী অনটন । তবু সুর থেমে নেই নব্বই ছুঁইছুঁই বঙ্গরত্ন প্রাপক উত্তরের অন্যতম সারিঞ্জাবাদক মংলাকান্ত রায়। ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধওলাগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ২০১৭ সালে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বঙ্গরত্ন দিয়েছিলেন এই প্রবীণ সারিঞ্জাবাদককে। বর্তমানে লুপ্তপ্রায় এই বাদ্যযন্ত্রকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন নবতিপর শিল্পী।
গত মাসের পঁচিশ তারিখের ঝড়ে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন মংলা রায় ও তাঁর স্ত্রী চম্পা রায়। বাড়ির গাছ ঝড়ে ভেঙে গেলেও বরাত জোরে রক্ষা পেয়েছে তাঁদের ঘর। বর্তমানে স্ত্রীকে নিয়ে চিলেকোঠার একটি ঘরে কোনওমতে দিন কাটাচ্ছেন মংলাবাবু। ঘরে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে সারিঞ্জা বাজিয়ে পাওয়া অসংখ্য মেডেল। তিন ছেলে ও চার মেয়ে প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সকলেই নিজের সংসারে ব্যস্ত। শরীরে বার্ধক্য বাসা বাঁধলেও সারিঞ্জার সুর থেমে নেই প্রবীণ শিল্পীর। আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে গানের ডাক এলেও লকডাউনের পর থেকে সব বন্ধ। এখন সম্বল বলতে সরকারের মাসিক এক হাজার টাকার ভাতা।
ছোট থেকেই গানের নেশা মংলা রায়ের। ১৫-১৬ বছর বয়সে গানের শিক্ষক ঘুমা কীর্তনিয়ার কাছ থেকে পুরোনো সারিঞ্জা কিনেছিলেন তিনি। একসময় এই বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে দৌড়ে বেরিয়েছেন গোটা উত্তরবঙ্গ। গানের সঙ্গে সারিঞ্জার সুরে নানারকম পশু-পাখির ডাক তুলে ধরতেন শিল্পী। কচিকাঁচাদের কাছে একসময় তিনি ছিলেন বড় আবদারের পাত্র। বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান মঞ্চ সারিঞ্জার সুরে মাতিয়ে তুলতেন মংলাবাবু। এখন সে সব অতীত। তবু বয়সের কাছে হার মানেনি তাঁর মনের জেদ।
মংলাবাবু বলেন, যতদিন প্রাণ আছে ততদিন সারিঞ্জার সুর বাজবে। তাঁর স্ত্রী চম্পা রায় বলেন, অনটনের মধ্য দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে কোনওমতে দিন কাটাচ্ছি। আগে গান গেয়ে যেটুকু উপার্জন হত, তা দিয়ে চলে যেত। কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিবম রায়বসুনিয়া বলেন, প্রবীণ এই শিল্পীকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।