ভারতীয় হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম কবি মহাদেবী বর্মার ১১৭ তম জন্মদিন

মহাদেবী বর্মা ভারতীয় হিন্দি সাহিত্যে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। মহাদেবী একজন বৌদ্ধিক মেধা সম্পন্ন মানুষ হলেও সহজ সরল অনুভবে তার লেখার একটা অন্তর্মুখী আবেদন রয়েছে।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কবিতা গল্পে প্রবন্ধে তার অনায়াস চলাচল।
২৬ মার্চ ১৯০৭ সালে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন আর পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭।

তার প্রবেশ প্রস্থান কোন বড়ো কথা নয়। হিন্দি কবিতায় আধুনিক ধারা ‘ছায়াবাদ’ আন্দোলনের তিনি একজন অগ্রণী সৈনিক। বাস্তব প্রত্যক্ষকরণের মধ্যেই একটি জগৎ আছে, এ সত্য হলেও তার বাইরে আরেকটি অদৃশ্য জগৎ রয়েছে যেটা অনুভবে অন্তর্লীন থাকে। এইভাবে বাস্তবতার দৃশ্যমানতা এবং বাস্তব জগতের বাইরের অদৃশ্যমান অনুভবকে তিনি তার কাব্যধারায় সম্পৃক্ত করেছেন। তাকে বলা হয় আধুনিককালের মীরা। তিনি প্রায়শই খাদি শাড়ি পরতেন। সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। জীবনে গান্ধীর ও বুদ্ধের জীবন দর্শনকে তিনি ভালোবাসেন। কবিতা লিখনের সঙ্গে কবির বাস্তব সক্রিয়তার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন তিনি। নারীদের চিন্তাভাবনার উন্নতকরণের জন্য তিনি বিতর্কের আসর বসাতেন এবং শিক্ষা বিস্তারে নারী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।।
রবীন্দ্রনাথ যেমন সাম্প্রদায়িক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য রাখিবন্ধন গড়ে তুলেছিলেন তার দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। পুরুষ এবং নারীর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য তিনি রাখিবন্ধন উৎসব পালন করতেন। অনেক অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব তার বাড়ি আসতেন তার হাতে রাখি বাঁধবার জন্য।

ভারত সরকার প্রদত্ত বহু সম্মানে তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন। তিনি পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ-এ ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি অর্জন করেছিলেন সাহিত্য আকাদেমি ফেলোশিপ নীরজা গ্রন্থের জন্য, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার তিনি
অর্জন করেছিলেন যম গ্রন্থের জন্য।

তিনি বলেছিলেন, পুরুষদের নিয়ে চিন্তা করবেন না, শুধু লিখতে থাকুন…..
কখনো কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন না কারণ তারা আপনাকে কখনোই পড়বে না।
তিনি আরো বলেছিলেন, মোক্ষের চেয়ে মাটিকে আমি বেশি বিশ্বাস করি।

কবির একটি হিন্দি কবিতা থেকে আমার অনুবাদ পাঠ

পরিচয় চাও কেন
মহাদেবী ভার্মা

পরিচয় চাও কেন, তুমি তো আমার মধ্যেই রয়েছো!
নক্ষত্র রাতগুলিতে প্রতিফলনে আলোকিত হয়ে ওঠে একটা জীবনের স্মৃতিসমূহ, ক্ষুদ্র আবর্তে জীবনের সৃজন সকল। যেগুলো এই ক্ষুদ্র আবর্তে দেখে, দেখে বিনম্র পদক্ষেপ।

আমি তো আর কোনো রত্ন মাণিক্য চাইনা
তোমাকেই তো সম্পদ হিসেবে আমার মধ্যে পেয়েছি।

তোমার বিচ্ছুরিত হাসি প্রভাতী সূর্যের মতো খণ্ড খণ্ড দুঃখগুলোতে এতো আলোর প্রতিফলন, এতো চেতনাময় স্বপ্নালু নিদ্রা!
আমাকে শ্রান্ত হয়ে অবিচ্ছন্ন ঘুমাতে দাও
আমি যদি বুঝতাম সৃজনের রহস্যকথা!

তোমার ছবি আঁকা হয়ে গেছে, আমি ওই ছবির এক বহির্রেখা মাত্র,
তুমি সুমধুর গান, আমি সরগম সুরের তার মাত্র
তুমি অসীম ,আমি তো সীমার রহস্য প্রকৃত প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের গোপনীয়তার মধ্যে পড়ে আছি।

কেন প্রেমসত্তার অভিনয়, কেন পরিচয় চাও,
তুমি তো আমার মধ্যেই রয়েছো।