বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর :: ভাটপাড়া বিধানসভা কে পাখির যোগ করে সামনে নির্বাচনে এই বিধানসভা অর্জুন এর হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে ছক নিয়ে তৈরি তৃণমূলের। ভাটপাড়া বিধানসভা পবন সিং এর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তৃণমূলের ঝুলিতে নিয়ে আসার দায়িত্ব এবার রাজ্যসভার সাংসদ এবং উত্তর 24 পরগনা ব্যারাকপুরের বিশেষ পর্যবেক্ষক দীনেশ ত্রিবেদী এবং সুবোধ অধিকারীর কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ভাটপাড়া বিধানসভা 11 থেকে 17 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সমস্ত নেতা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেন দীনেশ ত্রিবেদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং ভাটপাড়া নবনিযুক্ত পর্যবেক্ষক ও জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অধিকারসহ নৈহাটি বিধায়ক পার্থ ভৌমিক।

উল্লেখ্য ভাটপাড়া বিধানসভা রাজ্যের রাজ্য সরকার বিশেষ করে মমতা সরকারের জন্য একটি বড় মাথাব্যথা কারন উপনির্বাচনেরও এখানে সরকার নিজের দাঁত ফোটাতে পারিনি। সমস্ত চেষ্টা ও পুলিশি হয়রানিকে টক্কর দিয়ে ভাটপাড়া কে ম্যাজিকের মতন তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অর্জুন তার পুত্র পবন সিং এর জন্য।

এই ভাটপাড়া বিধানসভা এবার যেকোন মূল্যে কেড়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে শাসকদল তাই নির্বাচনের আগেই এক একটি ওয়ার্ড এক 1 জন নেতা-নেত্রীর উপরে দিয়ে তাদের জয় সুনিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল। তাই যার যেমন শক্তি সেই সেই ওয়ার্ডে তাদের দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল।

দীনেশ ত্রিবেদী সমস্ত ভাটপাড়ার নেতা-নেত্রীদের উপস্থিতিতেই পরিষ্কার ভাষায় জানান ভাটপাড়া পৌরসভা তৃণমূল দখল করলেও ভাটপাড়া পৌরসভা কে বকলমে অর্জুন সিং এতদিন চালিয়ে আসছেন। তিনি জানান এই পৌরসভা তে এতদিন যা কাজ হয়েছে অর্জুনের অঙ্গুলিহেলনে হয়েছে বলে তার কাছে রিপোর্ট আছে। তাই এখন থেকে প্রত্যেক নেতা-নেত্রীকে আলাদা আলাদা করে ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে আর নির্বাচনে তাদের শক্তিপরীক্ষা তাদের ওয়ার্ডের পারফরম্যান্স দেখেই বোঝা যাবে। দল কিভাবে তাদের ওয়ার্ডের জয় সুনিশ্চিত হবে তা দেখা কাজ সেই নেতা ঘাড়েই বর্তাবে।

মিটিংয়ে উপস্থিত পার্থ ভৌমিক কাউন্সিলর নেতাদের পরিষ্কার করে জানান যে সমস্ত ভেদাভেদ মান-অভিমান ভুলে এই বিধানসভা এবার জয় নিশ্চিত করতেই হবে তবে মিটিংয়ে উপস্থিত নেতা কাউন্সিলর পার্থবাবুর বিরুদ্ধে তাদের রাগ অভিমান উগরে দেন।

উল্লেখ্য অর্জুন সিং বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর ভাটপাড়ার দেখাশোনা সমস্ত কাজ অভিভাবক হিসাবে পার্থ বমি কি করে এসেছেন এতো দিন। কিন্তু গত জেলা মিটিংয়ে পার্থ ভৌমিক পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন যে যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই তিনি তার বিধানসভা অর্থাৎ নৈহাটি বিধানসভার উপরেই তার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে চান তাই তিনি ভাটপাড়া বা অন্য কোন এলাকার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।

বিধায়ক পার্থ ভৌমিক খুব সূক্ষ্ম চালে এই দায়িত্ব নিজের ঘাট থেকে সরিয়ে জেলার সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারী ঘরে ফেলে দেন। সুবোধ দায়িত্ব পেয়েই ভাটপাড়া নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন আর এই মিটিংয়ে ভাটপাড়া বিধানসভা তৃণমূল পার্টির চেয়ারম্যান ধরমপাল গুপ্তা দুই সভাপতি টিংকু ঘোষ এবং জিতু সাউ ভাটপাড়ার দলের কডিনেটর সোমনাথ শ্যাম সহ সকল তৃণমূল কাউন্সিলরদের তিনি জানান জয় করতেই হবে তার তার জন্য যা যা করা দরকার সবটাই করা হবে।

প্রত্যেক কাউন্সিলরকে তার নিজের নিজের ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় এছাড়াও যে ওয়ার্ডগুলো বিজেপির দখলে রয়েছে সেসব ওয়ার্ডের দায়িত্ব তৃণমূল নেতা নেত্রীদের আলাদা করে তুলে দেওয়া হল। যেমন এক নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মদনমোহন ঘোষকে তিনি আগে থেকেই কাউন্সিলরের এই ওয়ার্ডের।

দুই নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব সুনীল পিংকি অমরদা কে 3, শিও মুনি কে 4, সুলক্ষণা দেবীকে 5 অশোক দত্ত কে সাথ মাকসুদ আলম কে 8 ধর্মপাল গুপ্তাকে 9, মহিলা নেত্রী সিমা মন্ডল কে 10 তার সঙ্গে সংযুক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্টি সভাপতি দেবপ্রিয় ঘোষ কে।

হিন্দুত্বে মজবুত খুঁটি ও হনুমান ভক্ত গোপাল রাউৎ কে 11, গণেশ সিং এর ছেলে রাজু সিং কে 12 লালন চৌধুরীকে 13 নাসির খান কে 14 তবে নাসির খানের সঙ্গে দলের সভাপতি জিতু সাউকে সংযুক্ত ভাবে এই ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যদিও জিতু জানিয়েছেন তিনি নাসিরকে সবরকম সাহায্য করবেন দায়িত্ব নাসির খান সাহেবের হাতেই থাকবে।

অর্জুনের কট্টর বিরোধী সত্যেন রাইকে তেইশ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে নে 15 নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তবে এইবার দায়িত্ব সঞ্জুক্ত ভাবে সামলাবেন মনোজ গুহ। সোমনাথ সেন কে 16 নম্বরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যদিও গত নির্বাচনেরও সোমনাথ দায়িত্বে ছিলেন কিন্তু এই দাপুটে নেতা নিজের ওয়ার্ডে 5000 বেশি ভোটে হেরেছেন। 17 নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব রাজকুমার যাদব কে দেওয়া হয়েছে।

বেশিভাগ নেতা-নেত্রী ও কাউন্সিলর আলাদা আলাদা ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়ে খুশি তবে কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান যে যারা বড় বড় নিজেকে নেতা ভাবতেন তারা অর্জুনের সঙ্গে মিলে মানুষকে বোকা বানিয়ে এসেছেন এখন নিজে নিজে আলাদা আলাদা দায়িত্ব পাওয়াতে কে আসল গদ্দার বেরিয়ে আসবে নির্বাচনের ওয়ার্ড এর পারফরম্যান্স দেখেই।

আরো এক কাউন্সিলর জানান মিটিংয়ে দীনেশ ত্রিবেদী নিজেই পরিষ্কার জানিয়েছেন যে পৌরসভার বকলমের অর্জুনি চালিয়ে আসেন তবে এবার এই এই ব্যবস্থা চলবে না মানুষ ঠকানোর কারবার আর বরদাস্ত করা হবে না। কাউন্সিলর জানান যারা অর্জুন এর বিরুদ্ধে বড় বড় বুলি ছেড়েছে অর্জুন নিজে ভাগ থেকে তাকে কন্টাকটারিতে ভাগ দিয়েছেন।

জিতুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন মিটিংয়ে যা হয়েছে তাতে তিনি খুশি এখন প্রত্যেকের কার কেমন ক্ষমতা সব ধরা পড়ে যাবে বেরিয়ে আসবে আসল চেহারা। ধরমপাল গুপ্তা জানান অনেকে মাতব্বরি করে বেরিয়েছে অন্যান্য ওয়ার্ডের ঘুরে বেরিয়েছে কিন্তু তার নিজেরই ওয়ার্ড ফাঁকা।