অবতক খবর,৩ এপ্রিল:বীজপুরে বসবাস করছেন? তবে একটু সাবধান! আমাদের এই প্রতিবেদনটি একটু মন দিয়ে পড়বেন।
কিছুদিন আগেই আমরা ‘বীজপুরের শাহজাহান’ নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলাম। বীজপুরের শাহজাহানের খোঁজ পাওয়া গেছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন! শাহজাহান শুধু সন্দেশখালিতে নেই,রয়েছে বীজপুরেও। ফারাক এটুকুই যে,বীজপুরের যিনি তাঁর নাম শাহজাহান নয়। তিনি হলেন জনৈক দাস। আর তাঁর সাথে রয়েছে তাঁর দালাল জনৈক কুন্ডু।
এই দুজনকে নিয়ে শুরু করছি প্রথম পর্ব।
তবে শুরু করা যাক…..
প্রথমেই আমরা কথা বলব কাঁচরাপাড়া কেজি আর পথে অবস্থিত মায়া ভিলা নিয়ে। স্বাধীনতার পূর্বে এটি বনবিহারী মণ্ডলের নামে ছিল। বনবিহারী মণ্ডলের থেকে সেই মায়া ভিলাটি ১৯৫০ সালে নিয়ে নেন পুরান সিং। ফের ১৯৫০ সালেই পুরান সিং-এর থেকে এই মায়া ভিলা নিয়ে নেন গোপাল চন্দ্র দে। ১৯৫৯ সালে হস্তান্তর হয় বলরাম মল্লিক-এর কাছে।
এই বলরাম মল্লিকের তিন পুত্র। জয়ন্ত মল্লিক,চন্দন মল্লিক এবং নন্দন মল্লিক সহ রয়েছে আরো ৬ বোন। সবকিছু বেশ ভালই ছিল। হঠাৎ মল্লিক পরিবার চিন্তাভাবনা করল যে এই সম্পত্তিটি তারা বিক্রি করবেন। ২০১৬ সালে তারা এই সম্পত্তি বিক্রি করার উদ্যোগ নেন। সেই সময় প্রপারটি সার্চ করে জানা যায় নৈহাটি গরিফার বাসিন্দা দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাসের দখলে রয়েছে এই প্রপার্টি। দখল বলতে দোকান দখল নয়, প্রপার্টিতে বেআইনিভাবে ঢুকে বসে আছেন। এ নিয়ে মল্লিক পরিবার বিএল আরও-কে নোটিশ করেন। তারা প্রশ্ন করেন এই দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাস এরা কারা? কিভাবে তারা তাদের এই প্রপার্টিতে ঢুকে বসে আছেন? এই নিয়ে মামলা চলে। বিএলআরও দুই পক্ষকে ডেকে পাঠান ২০১৬ সালে। তবে দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাস আসতে চাননি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালেই বি এলআরও এই প্রপার্টি বলরাম মল্লিকের নামেই ট্রান্সফার করে দেন। এরপর সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ফের হঠাৎ ২০২২ সালে দেখা যায় দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাস এই প্রপার্টিতে ঢুকে পড়েছে। ফের মল্লিক পরিবার পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করে বিএলআরও-কে নোটিশ করে। বিএলআরও ফের দুই পক্ষকে ডেকে পাঠান। কিন্তু এবারও দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাস উপস্থিত হননি। ফলত,মল্লিক পরিবারদের হাতেই থাকে এই প্রপার্টি।
কিন্তু এই যে চক্রান্ত, দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাসের পেছনে রয়েছে আরেকটা বড় মাথা। তিনি হলেন দালাল ‘কুণ্ডু’। তিনি জমির দালালি করেন। তিনি ডিসপুট জমি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জমি দখল নেন, ক্ষমতার জোর! কারণ শাসকের আশীর্বাদ তার মাথার উপর রয়েছে। এই কুণ্ডু বেশ কয়েকবার জেলেও গিয়েছেন। কিন্তু এই কুণ্ডুর সাহস এতটাই বেড়ে গেছে যে, আজ যখন তখন এই ডিসপুট প্রোপার্টিগুলো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য চক্রান্ত করে। বলা যেতে পারে একটা জাল বিছিয়ে রেখেছে এই বীজপুরে।
মল্লিক পরিবার যখন দেখলেন যে এই দিলীপ দাস এবং সুচিত্রা দাস বারবার তাদের প্রপার্টিতে ঢুকে পড়ছেন তখন ১৯-০৮-২০২২ সালে মল্লিক পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিভাবে এই একটি পুরনো প্রপার্টিতে বেআইনিভাবে দিলীপ দাস সুচিত্রা দাস এবং এই কুণ্ডু ঢুকে পড়ছে সে বিষয়ে তদন্ত করার আবেদন জানান মল্লিক পরিবার।
ফের ২০২৪ সালে দেখা যায় দিলীপ দা সুচিত্রা দাস এবং কুন্ডু এই প্রপার্টিতে ঢুকে রয়েছে। এরপর তারা ২২.৩.২৪ তারিখে বিএলআরও-কে নোটিশ দেয়। বিএলআরও দুই পক্ষকে ডেকে পাঠালে মল্লিক পরিবারের সাথে এই দিলীপ দাসের হাতাহাতি হয়। গণ্ডগোল সৃষ্টি হয়, কারণ দিলীপ দাস বারবার তাদের এই প্রপার্টিতে ঢুকে পড়ছিল। বেআইনিভাবে দখল করার একটা চক্রান্ত করছিল।
গণ্ডগোলের জেরে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করে দিলীপ দাস। পরবর্তীতে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে মল্লিক পরিবারের লোকজন। কিন্তু অবশেষে পালাতে সক্ষম হয় দিলীপ দাস।
নৈহাটিতে ওই দিলীপ দাসের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই দিলীপ দাস এক সময়ে কাঁচরাপাড়ায় এসে সোনার ব্যবসা করতেন।
মল্লিক পরিবার এবছর মায়া ভিলার সমস্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক করেছেন। তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে যে, দীর্ঘ বছর ধরে এই যে একটা চক্রান্ত চলছে। তাদের বক্তব্য, ‘কিভাবে একটা ফেক ব্যক্তি সবকিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও তাদের নাম বারংবার আমাদের প্রপার্টিতে ঢুকে যাচ্ছে।’
তাই তারা বীজপুরবাসীর কাছে আবেদন করেছেন যাতে এই ধরণের চক্রান্তকারীদের কাছ থেকে মানুষ সাবধান থাকেন।
মল্লিক পরিবার আরো জানিয়েছেন যে, ‘এই দিলীপ দাস এবং কুণ্ডু কাঁচরাপাড়ায় প্রচুর জমি এই ভাবেই তারা দখল করে বিক্রি করার চেষ্টা করছে।’
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মল্লিক পরিবার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন যে, এই সকল মানুষের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এদের কাজই হলো বেআইনিভাবে বিভিন্ন প্রপার্টি দখল করে বিক্রি করে দেওয়া।
মল্লিক পরিবার জানিয়েছেন যে,”আমাদের প্রপার্টি তো আমরা পুনরুদ্ধার করলাম। কিন্তু কোন নিরীহ মানুষ যদি এদের জালে আটকে যায় তবে বেরিয়ে আসা খুব মুশকিল।”
“দিলীপ দাস এবং কুণ্ডু”- পর্ব ২ নিয়ে আমরা আসছি খুব শিগগিরই…. চোখ রাখুন অবতক খবরে…..