বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর ::  রাজ্য রাজনীতিতে বীজপুর সব সময় বিতর্কিত জায়গায় রয়েছে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে। একতরফা ভোট পড়তো বামেদের পক্ষে। এমন বলা হয় যে ভোট লুটেপুটে টক্কর দেওয়ার মতন কেন্দ্র তেমন খুব একটি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

ভোটের সময় সারা রাজ্যের মানুষের নজর থাকত এই বিধানসভা সিটের উপরে। পরিবর্তনের ঝড় ২০০৯-এ এলেও বীজপুর তেমনভাবে নড়চড় হয়নি। কিন্তু ২০১১-তে পরিবর্তনে হাওয়ায় উড়ে যান বাম প্রার্থী। এমন পরিবর্তন মানে পরিবর্তন মানে একেবারে ১০০% পরিবর্তন। এপিঠ-ওপিঠ বামেদের সময় সকলে বামপন্থী, আর যেই তৃণমূলের সময় এল তখন সকলে তৃণমূলী হয়ে গেলেন।

বামেরা হিসেব মেলাতে পারল না যে তাদের ভোটাররা কোথায় গেলেন? একেবারে এমন পাল্টি মেরেছে তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। শুধু পাল্টি জনগণ মারেনি বামপন্থীদের পরিবারের সদস্যরাও পাল্টে গেলেন। তার মানে?

মানে একটাই এর নাম বীজপুর।পাল্টি মানে ফুল পাল্টি।সোজা কথায় যেমন বামেদের সময় বিরোধীরা বুথে ঘেঁষতে পারতেন না তেমন তৃণমূলের সময়ও একই অবস্থা। ভোটের দিন বুথে যাওয়া বারণ বিরোধীদের।

তবে এখন এই চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে। লোকসভা ভোটে চিত্র অন্যরকম। নেতার চিন্তা না করেই সুযোগ পেলেই ভোটাররা পাল্টি মেরে দিলেন। তবে তৃণমূল এবার আগের ভোট প্রক্রিয়ায় হাঁটেনি। অতিরিক্ত বিশ্বাস ছিল ভোটারদের উপরে তাই স্বচ্ছ ভোট করাতে উদ্যোগ নিয়েছিল তৃণমূল। পাল্টি মেরে দেয় জনগণ।

এখন বীজপুরে নেতারা প্রায় সকলেই তৃণমূলে কিন্তু ভোট বাক্স অন্য কথা বলছে। তলে তলে মাটির সরে গিয়েছিল তৃণমূলের,জনগন বিরোধিদের দিকে।তবে এখন বামেদের জায়গায় রামদের দল ভারী অর্থাৎ বিজেপি পক্ষে ভোট বাক্স কিন্তু নেতা নেই। শুভ্রাংশু রায় ভোটের পর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করে নেন।সোজা কথায় নেতা ছাড়াই এই পরিবর্তন ঘটেছে।কিন্তু এইসব দেখে শাসকদলের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।

ভোট বাক্স দেখে প্রায় তৃণমূল নেতা কাউন্সিলর পাল্টি মেরে দল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেন। যদিও পরের দিকে তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপি থেকে ভেঙে সুবোধ অধিকারী কে তৃণমূলে যোগদান করায় ও তার ও তার দলের  দাপট দেখে বিজপুরের কাউন্সিলর নেতারা ধীরে ধীরে আবার পিঠ বাঁচাতে তৃণমূলে ফিরে আসেন।

বীজপুরে ভোটাররা/জনগণ বুঝে যায় যে এই দলবদলু নেতারা ধান্দাবাজ।যেদিকে ভারি দেখবে সেদিকেই পাল্টি মারবে। দলবেঁধে কাউন্সিলররা বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু সুবোধ অধিকারীর নেতৃত্বে দলভারী হতেই আবার পাল্টি মেরে এপারে ফিরে আসেন। কিন্তু প্রশ্ন, এরা আদৌ কি তৃণমূলের পক্ষে নাকি এরা পিঠ বাঁচাতে তৃণমূলে আবার গাদ্দারী করবে না, তা কে গ্যারান্টি দেবে?

ফের সামনে নির্বাচন। পৌর নির্বাচন সময় পার হয়েছে করোনা সংক্রমণের জন্য। পৌর ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি তাই এই নেতাদের মুখোশ খুলে পড়েনি। মানুষ তাদের মুখোশ ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন না। তবে ভোট এলেই সকলের মুখোশ খুলে আসল রূপে ফিরবেন।আর তখনই তাদের আসল রূপ দেখা যাবে। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোট পর্যন্ত।

তবে এ হলো এক ধরনের নেতাদের চরিত্র‌। কিন্তু এমন নেতাও আছেন যিনি মুখোশ কখনোই ত্যাগ করেন না। ভোটের সময়ও তাকে বোঝা যায় না। বোঝা মুশকিল এই নেতাদের নিয়ে ভয় বেশি থাকে। কখন দলকে ডুবিয়ে দেবেন তা কেউ টের পাবেন না, তাদের বোঝা খুব মুশকিল। এখন এমন মুখোশধারী নেতার ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে বিজপুরে।

তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারী বলেন, এমন মুখোশ পরা রাজনীতির সূচনা মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের হাত ধরেই ইদানিং বীজপুরে শুরু হয়েছে। তিনি দলে থেকে দলকে ডুবিয়েছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেলেন যে মানুষ তার চরিত্র বুঝে যাচ্ছে। তিনি মুখ মুখোশ পরে আছেন। তা সবটাই মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনিই প্রথম এই নতুন রাজনীতির সূচনা করলেন মুখোশ পরে দলে থেকে দলকে পেছনে ছুরি মারার কালচার শুরু করে

তবে সুবোধ অধিকারী জানান, বর্তমানে দল এমন মুখোশধারী নেতাদের ওপর কড়া নজর রেখেছে। প্রত্যেকেই দলের চোখে রয়েছেন। তিনি এমন মুখোশধারীদের সাবধান করে দিয়ে বলেন, মুখোশ খুলে জনগণের পাশে দাঁড়ান। সংগঠন গড়ে তুলুন। মানুষের জন্য কাজ করুন।তিনি বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে কিছু নেতাদের মুখোশ খুলে গেছে। তাই জনগণ সবই দেখতে পেয়েছে, বুঝতে পেরেছে। তিনি জানান, এবার মানুষ বেছে নেবে তাদের নেতা কে হবে মুখ নাকি মুখোশধারী!