বীজপুরের পটুয়াপাড়া
মাটির মানুষ, মাটির জীবনঃপর্ব-৫
তমাল সাহা
মা মা-ই এবং এবার দুঃখে ছোট মা বলছিঃ দেবেন পাল।
কাঁচরাপাড়ার পটুয়াপাড়া এখন দাসপাড়ায়। ভাগাড়ের কাছে। দেবেন পাল,যাদব পাল,অমর পাল এরা প্রতিমা বানান এখানে।
দেবেন পালের কারখানার নাম রাম ঠাকুর মৃৎশিল্পালয়। কারখানায় ঢুকতেই দেবেন বাবু বলেন, প্রতিবছর কত প্রশ্ন করেন, এবার বেশি প্রশ্নের দরকার নেই। বুঝলাম মন খারাপ। বাজার ভালো নয়। দেবেন বাবু বলেন, খরিদ্দারের তুলনায় দোকানে মাল বেশি। মাল বেশি মানে অপচয় বা ঝরা দাম। দুর্গা মায়ের দামও পড়তির দিকে! দেবদেবীর দাম কমে না বাড়ে? অদ্ভুত প্রশ্ন। এর জবাব দেবে কে?
দেবেন বাবু বলেন, শোনেন প্রতিমার আনুষঙ্গিক তো আপনার জানা। বছর বছর আসেন সবই জানেন। সব উপকরণেরই দাম বেশি। বেশি বললে ভুল হবে অত্যন্ত চড়া, ঊর্ধ্বমুখী। করোনার করুণায় পথে বসে গেছি। সোজাসাপ্টা শোনেন, গতবার ৬০টা প্রতিমা বানিয়েছিলাম সবই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবার ৩৫টা বড় বানিয়েছি এখনও পর্যন্ত তিনটের বায়না হয়েছে। নমো নমো করে এবার পুজো সারবে অনেকে। তারা এসে আগেই বাজেট বলে দিচ্ছে। তাদের মুখ থেকেই বাজার বুঝে ১৩ টি ছোট প্রতিমা বানিয়েছি। ১১টা বায়না হয়ে গেছে। ১৫ হাজার টাকার ছোট মা,৭ হাজার টাকায় নেমে গেছে। কোনবার আমার মুখে বড় মা-ছোট মা শুনেছেন? দুঃখে মাকে ছোট মা বলতে হচ্ছে, মশাই! আমার পাপ হবে।
এখন পাঁচজন কারিগর নিয়ে কাজ করছি, এদের কি পোষাবে? কি মজুরি দেব এখনও জানিনা। এরা সহযোগিতা করছে। দেখি, ছোট মা দুর্গা বানিয়েছি,ছোট মা দুর্গা কতটুকু আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে! বড় দুর্গা প্রতিমা কিনছে না। তাই মন খারাপ। কারণ ওটাই টাকার যোগান দেয়। তবে বড় মা কি বুড়ি হয়ে গেল? তার দিকে কারো নজর নেই। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলতে বলতে, বসে আবার ছোট ঠাকুরের কাঠামোয় নিজেই বিচুলি দিয়ে প্রতিমার দেহে সুতলির পাক দিতে থাকলেন। সুতলির পাক জীবনের পাকের সঙ্গে জড়িয়ে যায়।
দেবেন পাল বলেন, দেখেন কিভাবে মাকে পাক দিয়ে দিয়ে তার হাত পা তৈরি করছি। কিন্তু আমাদের হাতে পায়ে বাঁধন পড়ে গেছে। শারদ উৎসব জমাটি উৎসব। কি যে হবে এবার! বলে কপালের ঘাম মুছলেন।