হে মানুষ-এর প্রকাশ অনুষ্ঠানঃ
প্রৌঢ়ত্ব বাড়লে আমার ঋণ কমে না, ক্রমশ বাড়তেই থাকে
তমাল সাহা

প্রৌঢ়ত্বের শেষ চৌকাঠটি পেরোনের আগ মুহূর্তেও আমি ঋণী থেকে যাবো। আমার ঋণ বাড়তেই থাকে।
আমি তো তোমাদের পায়ের কাছেই বসে থাকতে চাই। আঁজলা ভরে নিয়ে যেতে চাই এই আনন্দঘন ঋণ।
তোমরা যদি বলো লোকটা ঋণ পরিশোধ করে যেতে পারলো না! আসলে আমি তো এই ঋণ শোধ করতে চাই না। সব মানুষ না হোক, কিছু মানুষ তো ছিল আমার নিকটে প্রতিদিন। থেকে যাক না কিছু অপরিশোধ্য ঋণ!

আমার এইসব ক্ষুদ্র কাজের অন্তরালে আমি তাদের প্রণাম জানিয়ে যেতে চাই। আমি মাথা নত করে তাদের অভিশাপ অথবা আশিস পেতে চাই। আমার এইসবের পেছনে রয়েছে কত মানুষ মানুষীর সহযোগিতা সহমর্মিতা সান্নিধ্যের সমাবেশ!

আমি নদী পারে গিয়ে বৃক্ষতলে বসি, আমি সতীমার মেলায় গিয়ে ডালিমতলে বসি, আমি পার্বত্য প্রদেশে গিয়ে সরলবর্গীয় বৃক্ষের নিচে বসি, আমি ইস্টিশনের চাতালে ছাতিম গাছের নিচে বসি।
আমি শুধু বৃক্ষনারীর কাছে শিখি।
বৃক্ষের শরীরে আমি নারীর নম্রতা খুঁজে পাই।
তাদের পদতলে শিকড়ের বিস্তার দেখি
তাদের শাখা প্রশাখায় বাহুলতার প্রসার দেখি
তাদের দেহের ফলবতী ঘনিষ্ঠতায় স্থির অস্থিরতা দেখি
আমি তাদের ছায়ায় আশ্রয় খুঁজি
ভাবি নারীবৃক্ষ তো শেষ পর্যন্ত আমার চিতার জ্বালানি কাঠও হতে পারে।
এই বিশেষ মুহূর্তে সন্দেশখালির নারী মায়েদেরও আমি দেখি। তারা আমাকে চেতাবনির যোগান দেয়! আর? এগারোতম সন্তানের জননী আমার মায়ের প্রতিকৃতির পদতলে বসে থাকি!

হে মানুষ! পুস্তিকাটি উন্মোচন কালে আমার এই সব মনে পড়ে। মানুষের সঙ্গ চাই, মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হতে চায়। এটাই তো তার ধর্ম।
এই উদ্বোধনী প্রহরে নৈহাটি থেকে ছুটে আসে সুনীতি দা-সুনীতি মালাকার সাহিত্যিক সাংবাদিক, ব্যান্ডেল থেকে চলে আসে কবি প্রাবন্ধিক সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, আমার পাশে এসে দাঁড়ায় সমাজকর্মী গণগায়ক নৃপেন রায়, গল্পকার সন্দীপ রায়, আমার সংলগ্ন হয়ে থাকে সংগঠক সাগর চ্যাটার্জি ও অর্ণব চক্রবর্তী।

কেউ উৎসাহ আগ্রহ দেখালে আমি তার পোষ্য হয়ে যাই। এও একধরণের প্রলোভন, যাতে আমি মেতে উঠি। নিশ্চিত এই প্রলোভনই আমাকে উৎসাহের উত্তেজনার যোগান দিয়েছে। হালিশহর সাংস্কৃতিক সংস্থার লাঙ্গল পত্রিকা আমাকে আস্কারা দিয়েছে। তাই লেখা হয়ে যায় হে মানুষ-এর সময়লিপি। আমি চোখ দিয়ে লিখি, লিখে চলি জাগতিক চলমানতা।

একুশে ফেব্রুয়ারি-তে কেন প্রকাশ হে মানুষ? তবে বলি এ দিনই বাংলাভাষার বিস্তৃত আয়োজন ও বিশ্বজনীন স্বীকৃতি। এই দিনেই প্রকাশিত হয়েছিল পৃথিবীর আশ্চর্যতম রেডবুক– কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। একুশ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৮।

আয়োজক উদ্বোধক উপস্থিতজনের কাছে আমি ঋণী।
আমি তো চিরঋণীই থেকে যেতে চাই।
হতে পারি কই?
আমি হতে চাই শব্দ কাপালিক রাষ্ট্রীয় ঘাতক খুনি।
অনুসন্ধানে মেতে আছি
কবে শব্দ হয়ে উঠবে আমার সোচ্চারিত স্বর
সেই সব স্বর হয়ে উঠবে ক্ষিপ্ত আগ্নেয় শর!
আগুন পৃথিবীর প্রথম আবিষ্কার
মানুষ! মানুষ!
আগুনের মধ্যেই নিহিত আমার শেষ চিৎকার তবেই বা বুঝি হবে আমার জীবনের আসল সৎকার!