প্রলম্বিত ছায়া
তমাল সাহা

চলমান চিত্রভাষ্য অথবা ভাষ্যচিত্র সব কথা মনে পড়ে যায় যখন কনকবালার কথা মনে পড়ে।
এখন যতসব দাঁতভাঙা নাম। যত পারো কঠিন উচ্চারণ ও জটিল অর্থের নাম রাখো প্রজন্মের। দেখাও নিজের প্রজ্ঞা ও প্রমা।

বল্ দেখি কনকবালা নামটি তোর কেমন লাগে?
কনকবালার বিয়ে হয়ে গেল ১১ বছর বয়সে। তো কোনো ছেলেপুলে নেই অথচ আজীবন মা হয়ে গেল। মা তো বটেই পিসি, মাসি এমনকি দিদিমাও হয়ে গেল!

আমাদের বয়সীরা তো ৭০ দশকের প্রারম্ভিক কাল থেকেই তার ভক্ত হয়ে গেল।
আপনজনের রাজনৈতিক পরিবেশে মাস্তানদের দৌরাত্ম্য সামাল দিতে কি করেছিল কনকবালা? বজ্রগর্ভী সময়। রবি আর ছেনোরা তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ছেনোর বন্দুক থেকে ছুটে এলো বুলেট। ফুঁড়ে বসলো কনকবালার বুকে তখন তো সে আনন্দময়ী।

কনকবালা হয়ে গেল সপ্তপদীতে রিনা ব্রাউনের মা, প্রণয় পাশাতে অন্য ধরনের মা আর সাত পাকে বাঁধাতে মেয়ের বাড়ি গিয়ে সে কী দাপট রে বাবা!
পদীপিসির বর্মী বাক্সতে তো রীতিমতো পিসি।

তপন সিনহা মানেই কনকবালা।
হারমোনিয়ামে সে এক মুজরো নাচের শৈল্পিক বিভঙ্গ আর কণ্ঠস্বরের মুগ্ধতা!
ধনরাজ তামাংয়ে দেশোয়ালি নাচ নেচেছিল কনকবালা আর চেনা অচেনায় সৌমিত্রর সঙ্গে বল ডান্সের মহিমা দেখিয়েছিল।
আরোহীতে হুঁকো টেনে বুঝিয়ে দিয়েছিল কাকে বলে তোমার ধূম্রপান!

হারমোনিয়াম-এ বেশ্যাপাড়ায় নিজের নেতৃত্ব কায়েম করতে কনকবালা হয়েছিল দাপুটে মাসি। আর সেই শৈল্পিক নাচ, আহা! ছল করে জল আনতে আমি যমুনাতে যাই….

এসবই কনকবালার জীবনের গল্প। কনকবালা গাঙ্গুলি শেষ পর্যন্ত ছায়া দেবী হয়ে গিয়েছিল।

তার দীর্ঘ প্রলম্বিত ছায়া এখনও পড়ে আছে সিনেমা পাড়ায়।