অবতক খবর,১৮ জুলাই,মলয় দে নদীয়া:- গতকাল ছিল মহরম। আর এই উপলক্ষে মুসলমান ধর্মালম্বী মানুষজন সারা পৃথিবী জুড়ে পালন করে থাকে শোকের এই উৎসব। এই দিনেই হাসানকে যেমন বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হয়েছিল তেমনি হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল কারবালায়।
শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আজও সেই আক্ষেপ রয়ে গেছে, তাই নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত, লাঠি খেলা, নারী পুরুষ নির্বিশেষে জাতি দেশ এবং সমাজকে রক্ষা করার জন্য আজও নিয়মিত অনুশীলন করা হয় এবং মহরমের দিন স্থানীয় একটি মাঠ যা কারবেলা বলে পরিচিত সেখানে তা প্রদর্শন করা হয়।
শান্তিপুরে এইরকমই বহু প্রাচীন কারবালার মাঠ হল নতুন হাট অঞ্চলে, জীবন জীবিকার স্বার্থে ওই সুবিশাল মাঠ এখন পুরসভা পরিচালিত বাজারে পরিণত হয়েছে কিন্তু এই বিশেষ দিনে পুরসভা এবং পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় সেই মাঠ পরিষ্কার করে বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখানো এবং তাজিয়া নিয়ে শোভাযাত্রা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে থাকে। এই উপলক্ষে গতকাল শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ, বিধায়ক ব্রজ কিশোর গোস্বামী, রানাঘাট পুলিশ জেলার অ্যাডিশনাল এসপি শান্তিপুর থানার ওসি সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপুরের বহু প্রাচীন লোক সংস্কৃতিতে পরিণত হওয়া এই উৎসবের অংশগ্রহণ করেন।
তবে কারবালা কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু বছর ধরে শিল্পকলা সমৃদ্ধ তাজিয়া নির্মাণ, লাঠি খেলা, এবং শ্রেষ্ঠ আলোকসজ্জার উপর পুরস্কার দিয়ে আসছেন অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য। এবারেও মোট ১১ টি মহরম পালন কমিটি গতকাল সন্ধ্যায় উপস্থিত হন শান্তিপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
তবে অসাধারণ সেই সমস্ত শারীরিক দক্ষতার বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখাতে গেলে যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন দিনে দিনে তা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যা তৈরি হচ্ছে বিগত বহু বছর বাদে আবারো গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই লাঠি খেলায় প্রচন্ড ভিড়ের কারণে এক কিশোরী এবং এক পূর্ণবয়স্ক লাঠিয়ালের মাথায় আঘাত পায়। যদিও এই কারণে পুরসভার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য বলেই মনে করছেন কমিটির সদস্যরা শুধু তাই নয় সরাসরি শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সুপারের বিরুদ্ধ একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন তারা রীতি মতন তাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছিলেন মেডিকেল টিম চেয়ে কিন্তু তিনি নিজে যেমন আসার প্রয়োজন বোধ করেননি তেমনি মেডিকেল টিম ও পাঠানোর প্রয়োজন মনে করেননি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।
তবে আজ সন্ধ্যায় কারবালা কমিটির অফিস থেকে গতকাল শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে তিনটি পুরস্কার দেওয়া হতে চলেছে। নতুন পাড়া আদর্শ ক্লাব শ্রেষ্ঠ তাজিয়া নির্মাণ, গোপালপুর দক্ষিণ শ্রেষ্ঠ আলোকসজ্জা এবং শ্রেষ্ঠ লাঠি খেলায় নতুনহাট মনিহার সংঘ এই পুরস্কার পেতে চলেছে ।
তবে আয়োজকরা বলেন এবার নাইলন সুতো বর্জন করে পুরনো দিনের সুতি সুতো দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর বার্তা হিসেবে একটি তাজিয়া নির্মাণ করা হয়, বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মৌন প্রতিবাদ এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে একটি তাজিয়া কাঁচা লঙ্কা ঢেঁড়স এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের আনাজ দিয়ে নির্মাণ করা হয়, শান্তিপুরের গর্ব হস্তচালিত তাঁত শিল্পের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে কাপড়ের টুকরো দিয়ে নির্মিত হয়েছে আরও একটি তাজিয়া। তাই বিষয় ভাবনার উপর এ বছর কোন প্রস্তুতি না থাকলেও আগামী বছর থেকে একটি করে পুরস্কার বাড়িয়ে দেওয়া হবে।