অবতক খবর,৮ মার্চ,অয়ন চ্যাটার্জী: বর্তমান সময় আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বাংলা হারাতে বসেছে প্রাচীন পুতুল নাচের সংস্কৃতিকে। একটা সময় এই পুতুল নাচ ছিল বিনোদয়ের মূল উৎস, কিন্তু ভিডিও গেম, টেলিভিশন এবং স্মার্টফোন সহ নানান যন্ত্র আশায় তৈরি হয়েছে বিনোদনের একাধিক পথ। তবে,এখনো গ্রাম বাংলায় গেলে দেখা মেলে এই পুতুল নাচের ঐতিজোকে, কিন্তু আগের তুলনায় বর্তমান সময় তার চল এখন প্রায় লুপ্তের দিকে।

শিল্পীদের মতে এই পুতুল নাচের চল এখন সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ এবং মেদিনীপুর জেলাগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি শিল্পীরা শহরের মেলা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সরকারি অনুষ্ঠানে এই পুতুল নাচ দেখিয়ে থাকেন। একবারে বলা যেতে পারে শিল্পীদের এটাই একমাত্র রুজি রুটির রাস্তা।

পুতুল নাচের মাধ্যমে শিল্পীরা শিশুদের বিনোদনের জন্য রূপকথার গল্প থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রামায়ণ এবং মহাভারতের মতো নানান পৌরাণিক কাহিনী পরিবেশন করে থাকেন।

তবে এই পুতুলের প্রাণ না থাকলেও এর মাধ্যমেই নানান কাহিনী তুলে ধরা যায়। যা মানুষকে অজানা দেশ, বিদেশ, কাহিনী সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে থাকে। সুতরাং এটি সারা বিশ্বের সংস্কৃতির একটি জায়গা করে নিয়েছে। এই পুতুল যেমন শৈশবের স্মৃতিচারণ করায়, তেমনই নানান দৃশ্যও তুলে ধরে। তাই এর তাৎপর্য অনেক।

তবে ,পুতুল নাচের এই পুতুল তৈরি পদ্ধতি কি? নিশ্চয়ই আপনাদের মনে এই প্রশ্ন ঘুরছে, তবে আসুন তা জেনে নি কি ভাবে এই হাতের পুতুল তৈরি হয়।

আগেকার সময় নদীতে ভেসে আসা অথবা মাঠে পড়ে থাকা সোলার বাক্স গুলি সংগ্রহ করে শিল্পীরা সেই বাক্সগুলিকে কাজে লাগিয়ে এক মাপের চার কোণকে বাদ দিয়ে সোলার ছাল ছাড়িয়ে সাদা অংশটিতে আঠার লেপ লাগিয়ে প্রায় দুইদিন রোদে শুকোতে দেয়, এরপর ওই সাদা অংশটি কাটপাটি করে একটি মানুষের আকৃতি সৃষ্টি করে পুতুল নির্মাণ করা হতো।

কিন্তু, বর্তমান সময় সোলার বাক্সের পরিমাণ কমে আশায় পুতুল তৈরির শিল্পীরা বাক্সের বদলে থার্মোকলের দ্বারা পুতুল নির্মাণ করেন, তবে শিল্পীদের মতে আগেকার তৈরি পুতুলগুলির মত এখনকার থার্মোকলের পুতুল টেকসই নয়।বড়জোর সেই পুতুলগুলির আয়ু দু’বছর। শিল্পীদের তৈরি একটি হাতের পুতুল হলেও তাদের কাছে এটি একটি বড় আবেগ।

আগেকার সময় মুভি থিয়েটার বা কোন ওটিটি প্লাটফর্ম ছিল না। কিন্তু আগেকার দিনে কি বিনোদন হতো না? না অবশ্যই হতো! তখনকার সময় এই পুতুল নাচ ই ছিল তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্কদের কাছে বিনোদনের মূল উৎস।

শিল্পীরা জানিয়েছেন ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল অব্দি প্রায় এই পুতুল নাচ একবারে লুপ্তের দিকে ঢলে পড়েছিল, কিন্তু ২০১১ সালে তে মমতা ব্যানার্জি আশায় আবার এই হাতের পুতুল নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।