কেউ নেই, কাকে আর বলবো? নিরক্ষরের নিষ্ফল ক্ষোভ তাই তোমার কাছে।
পথের পাঁচালী
তমাল সাহা
অপু দুর্গা বড়ো হয়ে গিয়েছে। তারা এখনো চাকরি পায়নি। তুমি তো চলে গেলে! এসব কোন খবরই তো রাখোনি।
অপু এখন যুবশ্রী ডোল পাচ্ছে।
দুর্গা পাচ্ছে কন্যাশ্রী ভাতা। সবুজ সাথী সাইকেল কবেই পেয়ে গিয়েছে সে।
হরিহর এখন পুরোহিত ভাতা পায়।
সর্বজয়া বলেছে, রূপশ্রী ভাতা পেলেই দুর্গার বিয়ে দিয়ে দেবে।
দুর্গা ধর্ষিতা হলেও পেয়ে যেত ধর্ষণের দাম
ইন্দিরা ঠাকরুণ থাকলে এখন পৌঁছে যেত
সমব্যথীর খাম।
সর্বজয়াও এখন বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছে।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও হয়ে গিয়েছে তাদের।
দারিদ্র্য, হাভাতে মানুষ বিধ্বস্ত নিরন্ন
এখন রাষ্ট্রের দয়ালু হাতের পণ্য!
অপু ও দুর্গা যে কাশবন পেরিয়ে রেলগাড়ি দেখতে গিয়েছিল সেখানে এখন অসংখ্য আকাশছুঁই ফ্লাট হয়ে গিয়েছে। বড়লোক মানুষরা সেখানে থাকে। তারা চার চাকার গাড়ি করে নামে।
কচুরিপানা ভর্তি যে পুকুরটাতে
অপু দিদি মারা যাবার পর চুরি করা মালাটা ফেলে দিয়েছিল
সেটা এখন পঞ্চায়েত মেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা করে ভরাট করে ফেলেছে প্রোমোটার।
সেই হুইসেল বাজানো রেল ইঞ্জিন আর নেই, ইলেকট্রিক ট্রেন হয়ে গেছে।
টেলিগ্রাফে তারের বদলে এখন এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ চলে যায়।
ইলেকট্রিক ট্রেনও বেসরকারিকরণ হয়ে যাবে বলে শুনছি
রেল স্টেশন ওরা কিনে নেবে।
বেসরকারিকরণ কথাটার মানে অবশ্য আমি অত বুঝিনা।
ভাগ্যিস! তখন তুমি এই সিনেমাটা করে গিয়েছিলে এখন এইসব দৃশ্য পেতে কোথায়?
তোমার চলচ্চিত্রকার হওয়া, অস্কার পাওয়া ফসকে যেত
শুনছো মানিকদা– সত্যজিৎ রায়!