গণতন্ত্র যদি শপিং মল হয়, নির্বাচন, প্রার্থী সবই বেচাকেনা মাল — পণ্য হয়ে ওঠে। ভোটে আরও কী কী পণ্য হয় ক্রমে ক্রমে শুনতে থাকুন

পণ্য
তমাল সাহা

আবার টুকুন। আমার সেই পাকু মেয়ে।

বাবা! পণ্য কাকে বলে?

যা কেনাবেচা যায় তাকেই পণ্য বলে। বাজার থেকে আনা নিত্যব্যবহার্য সব জিনিসই পণ্য।

বাবা! নারীরা পণ্য হয়?
জীবনানন্দ লিখেছেন,
সবই নেয়, নারীকেও নিয়ে যায়।
বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠে লিখেছেন,
তারপর মেয়ে বেচিতে আরম্ভ করিল…তারপর স্ত্রী বেচিতে আরম্ভ করিল।

তাহলে বাবা, আমিও পণ্য,মা-ও পণ‍্য!

আমি টুকুনের মুখের দিকে না তাকিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকি।

বাবা! মৃত্যু, হত্যা কি পণ্য হয়?
যুদ্ধ পণ্য হয়? দেশপ্রেম, যুদ্ধাস্ত্র পণ্য হয়?

কেন? এসব কথা উঠছে কেন?
আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি।

ভোটে জয়ী হতে ওরা এসবকে পণ্য করছে। সওদা করছে খোলাখুলি—প্রকাশ্যে।

ওরা মানে কারা?

ভোটবাজরা।
পুলওয়ামায় দেশের উনপঞ্চাশ জন তরুণ সৈনিক খুন হয়ে গেল।
হত্যার ঘটনা, দেশপ্রেমের পণ্য হয়ে উঠল ভোটে।
বালাকোটে বলদর্পী মিগ-মিরাজ যুদ্ধবিমান
তিনশো জনকে বেমালুম বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিল।
এয়ার স্ট্রাইক— দেশপ্রেমের তাকত দেখালো, ভোটে তা সওদা হয়ে উঠলো। মহাশক্তিশেল গুঁড়িয়ে দিল মহাশূন্যে ভাসমান উপগ্রহ।
ভোটবাজারে পণ্য হয়ে উঠলো স্লোগান— মেরা ভারত মহাশক্তিমান।
দেশ বাঁচানা হ্যায় তো হামকো লাও।

গণতান্ত্রিক ভোটে
শোক, অশ্রুকণা,রুমালে চোখমোছা,
বৈধব্য-বেশ,নিহতের প্রতিকৃতি, ফুলের মালা সবই হয়ে যায় পণ্য।

বাবা! ক্ষমতা,মসনদের জন্য
মানবিকতা সব কিছু নগণ্য ?

টুকুন নিথর নিশ্চুপ।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
ভোট! ভোট! কী জঘন্য!