পাঁচ বছর আগের পুরনো একটি লেখা

দেখো, সাংবাদিকতা কাকে বলে! তুমি যদি ভারতবাসী হও,চিনে রাখো মেয়েটিকে। ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ যে একা লড়েছিল ক‍্যামেরাস্ত্র হাতে তিরুবনন্তপুরমের রাস্তায়। শুনুন

দ্য ক্যামেরা গার্ল
তমাল সাহা

একটা ধর্মান্ধ ঘুষির
ওজন কত কে জানে?

একটা বিরাশি সিক্কার
চড় খেলে পৃথিবী
কীভাবে ঘুরতে থাকে
চোখের তারায়
কেউ কি জানে?

একটা দড়াম্ কিল
বজ্রগর্ভী শব্দে পিঠের
ওপর আছড়ে পড়লে
দেহটি কতটা কুঁজো
হয়ে আসে
তা কে জানে?

আসল লাথি কাকে বলে
তুমি কোনোদিন দেখোই নি!
পুরুষালি লাথি
খেয়েছো কোনোদিন?
পুরুষালি শব্দটি
অপমানিত হলো এইখানে।
এই তান্ডবে মেয়েলি
শব্দটি মেয়েলিপনার
দৌর্বল্য উড়িয়ে নারীত্বের
মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

এসব খবর তুমি পাবে
যদি যাও সাজিলার কাছে।

ক্যামেরা হাতে একটি মেয়ে—
কাকে ভয় পায় ধর্মান্ধরা!
কাকে ভয় পায় ধর্ম উন্মাদেরা?
ক্যামেরা, না মেয়েটিকে
তাই বা কে জানে!

সাহসকে অ্যাবস্ট্রাক্ট
নাউন বলে,
অনুভবে যাকে দেখা যায়।
সাহসিকা বিমূর্ত হয়ে ওঠে—
আমার সামনে এসে দাঁড়ায়

নারীত্বের অধিকার?
বিরুদ্ধ প্রতিবাদ যখন
দৃশ্যমান তান্ডব হয়ে ওঠে,
হয়ে ওঠে অগ্নিগর্ভ
তখন মেয়েটি
অগ্নিহোত্রী হয়ে যায়।

ধর্ম কাকে বলে?
ধর্মবাদ মানে কি নারী লাঞ্ছনা?

দ্রুততা কাকে বলে
তা দেখায় মেয়েটি—
ক্যামেরা কাঁধে দৌড়তে থাকে
তান্ডবের ভেতর দিয়ে
তান্ডবকে উপেক্ষা করে।
ক্যামেরা হয়ে উঠতে
থাকে চোখ
চোখ হয়ে উঠতে থাকে
ক্যামেরা—
দ্রুততার সঙ্গে তুলে যায়
মারমুখি দৃশ্যপট।

দ‍্যাখো!মেয়েটিকে দ‍্যাখো!
মুখে, কাঁধে, পিঠে, বুকে
সমানে পড়ছে
চড়, কিল, লাথি, ঘুষি…
ভারতবর্ষ! ভারতবর্ষ আমার!
কী দেখছো তুমি
তোমার মুখে অট্টহাসি!

যন্ত্রণায় হতমান মেয়েটি
দ‍্যাখো তার মুখটি।
অথচ ক্যামেরায় কেমন
রেখেছে ধরে সজাগ চোখটি!

তুঁতে রঙ কিসের প্রতীক?
নীল তো বিষ—
দেশ জুড়ে ধর্মান্ধেরা
দাপটে বাজায় শিস।

মেয়েটির পরনে ছিল
তুঁতে সালোয়ার।
লড়াকু ক্যামেরা গার্ল
সেদিন পেয়েছিল
ভুরি ভুরি উপহার
কিল, চড়, লাথি ঘুষি।

আয়! ভারতবর্ষ
আরও কাছে আয়!
তোকে একটু চুম্বন করি,
ভালোবাসি।

তিরুবনন্তপুরম, সেদিন
একটি নামে উজ্জ্বল আসমান।
ঐ দ‍্যাখো ক্যামেরা
কাঁধে ছুটছে মেয়েটি
সাজিলা আবদুর রহমান।