আজ কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন
উপসাগর বিধৌত এই দেশ, নদীতে গান গেয়ে যায় মাঝি মাল্লা,পলল সমভূমিতে গড়ে ওঠে মানবজীবন-সেএক অনুপম উপাখ্যান। ভূমিপুত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ
দেশ চেনাচ্ছেন তিনি
তমাল সাহা
গুলঞ্চলতা,ভাট-বৈঁচি গাছের ঝোপ,শেয়াকুল
কুঠির মাঠ, আষাঢ়ুর হাট,
সলতেখাগীতলা গোঁসাই বাগান
মুচুকুন্দ চাঁপাফুল, আলকুশি বীজ
কত সে শাব্দিক সুগন্ধে তুমি
সাজাও স্বদেশ-শরীর!
বাবলা গাছে নীলকন্ঠ পাখি উড়ে আসবে
এখন নীলুদের তালগাছের মাথার ওপরে
চিল উড়তে উড়তে কতদূরে গিয়ে
বিন্দু হয়ে যায়!
নেশার মতো ঘোর লাগিয়ে তুমি আমাকে দেখিয়েছিলে বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায় রানুদিদির মুখ,
নারকেল মালায়
তেল নুন জড়ানো আমের কুসি,
ভাইয়ের পিঠে দুম করে কিল,
ঠোঁটে লেগে আছে নুনের গুঁড়ো,
ওড়-কলমি ফুলের নোলক দুগ্গার নাকে—
কলমের মুখে বর্ণ বসিয়ে বসিয়ে তুমি দেশ আঁকো।
চিনিবাস ময়রা হেঁকে যায়,
বিশালাক্ষী মন্দিরের রুদ্রাণী রূপ,
সুর করে মায়ের কাশীদাসী রামায়ণ পাঠ
গুরুমশায়ের পাঠশালা, এটা কি নাট্যশালা?
মাস্টারির ফাঁকে সৈন্ধব লবণ ওজন—
এইসব কথা ধূসর হয়ে গিয়েছে
অথচ তুমি পাশে এসে দাঁড়াও প্রতিদিন।
দেশকে চেনাও আমায়!
মনে পড়ে আতুরি ডাইনির মৃত্যু
আর পাড়াবেড়ানো দুগ্গার
সেই অগোছালো জীবন মৃত্যুর ছায়া।
রাঙিগাইয়ের বাছুরের খোঁজে রেললাইন আর টেলিগ্রাফের তার আবিষ্কার!
তুমি খলসেমারির বিলে
পদ্ম ও ফড়িংয়ের জীবনদৃশ্য আমাকে দেখিয়েছিলে।
এ কোন রহস্যর কথা বোঝাতে চেয়েছিলে,
বুঝিনি বহুদিন।
রামনবমী, দোল, চড়কমেলায়
আমাকে দেখিয়েছিল মানুষের ভীড়।
আমার হাতে তুলে দিয়েছিলে
সচিত্র চন্ডীমাতা মাহাত্ম্য– ফুল্লরার বারোমাস্যা-কালকেতু উপাখ্যান, পদ্মপুরাণ আর একখানি টিনের রেলগাড়ী।
কেন তুলে দিয়েছিলে তুমি সেসব?
গেরস্থালি জীবনপাঠ কী
লুকিয়েছিল ওইখানে?
চাঁদের পাহাড় দেখাবে বলে
সেই কবেই তুমি আমার হাতে তুলে দাও শকুনির ডিম!
এই ডিমে পারদ পুরে রোদে রাখলে নাকি আকাশযান হয়ে যায়?
সেই ডিম মুখে করে
কারা নাকি দূর মহাশূন্যে উড়ে চলে যায়!
কেন তুমি আমাকে বারবার যুদ্ধের সেনাপতি সাজাও
যুদ্ধের রথ থেকে তীর ছোঁড়া শেখাও
কখনও হাতে তুলে দাও তরবারি।
অর্জুনকে ছোট করো
কর্ণের জন্য তুলে আনো
আমার চোখে অশ্রুসজল বারি!
আর আঁসমালীর দীনু সানাইদার
রসুনচৌকিতে বাজিয়ে যায় আগমনী সুর…
তখন হরিহরের হাতে
দুগ্গার পুজোর শাড়ি ভেসে ওঠে
আমার নরম ভেজা চোখের ভেতর—
বাংলার বিষাদ বিধুর মুখ।
বুঝিনি এতক্ষণ
ওই তো ইছামতী নদী
নিশ্চিন্দিপুর দেখি।
আমার পেছনে
অপু, দুর্গা, হরিহর, সর্বজয়াকে নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছো তুমি
সঙ্গে পথের পাঁচালীর দর্শন।
ওই তো বিভূতিভূষণ!