অন্য দুর্গা, আমার চিন্ময়ী দুর্গা

দেবীগর্জন
তমাল সাহা

দুর্গ থেকে যদি দুর্গা হয় তবে
স্বচক্ষে দেখিয়াছি আমি
কমপক্ষে তিরিশ জন দুর্গা স্বমহিমায়
কাংরা দুর্গ উপত্যকায়।

তাই আমি মন্ডপে
দুর্গা দেখিতে যাই না আর
জীবন্ত দুর্গা
আমার চোখে ভাসে বারবার।

দুর্গাদের আমি স্বচক্ষে দেখেছি
মাতৃরূপে নয়, দেখেছি তাদের
সংহারিণী রূপ।
বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম
সেনারূপী রাষ্ট্রাসুরের সঙ্গে
নিরস্ত্র দুর্গার অসম লড়াই।
সমগ্র বিশ্ব হতবাক ও অভিভূত
যার পর নাই।

মণিপুরে নয়া চৈতন্যের জন্ম হলো যেদিন
খোল করতাল মৃদঙ্গ ছেড়ে
নারীরা মুখোমুখি লড়াইয়ে যায়
সেদিন মণিপুর আকাশে বিধ্বংসী ঝড় ওঠে
বিদ্যুৎ চমকায়।

এগারো জুলাই দু হাজার চার
রাতে নামে অন্ধকার—
সেনা-অসুর ঢুকে পড়ে
তরুণী দুর্গার বাড়ি।
ভয়ার্ত দুর্গা চিৎকার করে
আছাড়ি পাছাড়ি।
বন্দুকের মুখে বিবস্ত্রা দুর্গা
লজ্জায় লুকায়
শুয়ে পড়ে কর্দমাক্ত চৌতারায়।

তারপর…
নারীদেহ টেনে নিয়ে কতদূর যেতে পারে,
কতদূর যায়!
অন্ধকারে শুধু নক্ষত্র জ্বলে চাঁদের পাহারায়।
বলদর্পী অসুরদের চলে
গণতান্ত্রিক বলাৎকারের মহড়া।
ভারত মানচিত্র ছোট হয়ে আসে–
কোথায় দুর্গা!
মনোরমার গোপন অঙ্গ জঙ্ঘা
তখন বুলেটে ঝাঁঝরা।

একটি দুর্গা খুন হলে
অসংখ্য দুর্গা বেরিয়ে আসে—
উন্মুক্ত তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।
দুর্গা কি কখনো রণে দেয় ভঙ্গ?

নগ্ন প্রতিবাদে দুর্গারা মেতে ওঠে
সেনাদপ্তরের সামনে
সেনাদের ডেকে বলে,
কত রেপ করবি আয়!
দ্যাখ, এসেছি উলঙ্গ বসনে!
দণ্ডশীর্ষ থেকে জাতীয় পতাকা
ছিঁড়ে পড়ে লজ্জায়।

এইসব দুর্গার কাছে হেরে যায়
দুর্গা দশপ্রহরণী
নিরস্ত্র দুর্গার ভয়ে কেঁপে ওঠে সমগ্র মেদিনী।

প্রহরণ-অস্ত্র ছাড়াও যুদ্ধ করা যায়
দেখো! ভারতবর্ষ দেখো!
নগ্ন দুর্গা মায়েরা আমার
কিভাবে যুদ্ধ-প্রক্রিয়া শেখায়।