অবতক খবর,৩০ অক্টোবর: হিন্দু শাস্ত্রে দশমহাবিদ্যার উল্লেখ রয়েছে বারংবার। শিব পুরাণ অনুযায়ী যখন মাতা সতীর পিতা রাজা দক্ষ শিবহীন যোগ্যর অনুষ্ঠান আয়োজিত করেন এবং দেবাদিদে মহাদেব কে বাদ দিয়ে সকল দেবগন ব্রহ্মা-বিষ্ণু সহ আমন্ত্রিত করেন । মাতা সতী এই যোগ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য মহাদেব কে জানান ফলে মহাদেব রাজি না হওয়ার কারণে মাতা সতী তার অলৌকিক শক্তির দ্বারা কালি রূপ ধারণ করেন।

দেবাদিদেব মহাদেবের স্ত্রী রুদ্র হবার কারণে মহাদেব সেখান থেকে সরে যেতে লাগলেন এবং মহাদেব যেইদিকে সরতে যান সেখানে দেবীর একের পর এক রূপ আবির্ভূত হয় তারপর মহাদেব কে দেবী দশটি রূপ দ্বারা ঘিরে রাখেন।এই দশটি রূপ দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর প্রথম রূপ হল মা কালী, হিন্দু শাস্ত্র মতে দেবী কালীকে, কালিকা ও বলা হয়। অথর্ববেদে প্রথমদিকে দেবী কালীর কথা উল্লেখ আছে।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর দ্বিতীয় রূপ মা তারা,তাকে পার্বতীর তান্ত্রিক স্বরূপ আদিশক্তির একটি রূপ বলে মনে করা হয় । তার তিনটি সবচেয়ে বিখ্যাত রূপ হল একজতা, উগ্রতারা এবং নীলসরস্বতী । ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তারাপীঠের মন্দির এবং শ্মশানভূমি তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপাসনা কেন্দ্র ।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর তৃতীয় রূপ হল মা ত্রিপুরা সুন্দরী ,হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী কে রাজরাজেশ্বরী , ষোরশী এবং ললিতা নামেও পরিচিত।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর চতুর্থ রূপ হলো মা ভুবনেশ্বরী,দেবীভাগবত পুরাণে তাকে আদি পরাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর পঞ্চম রূপ হল মা ভৈরবী। ভৈরবীকে শুভঙ্করী নামেও ডাকা হয়, যার অর্থ হল তিনি তার ভক্তদের কাছে শুভ কর্মের কর্তা যারা তার সন্তান, যার অর্থ তিনি একজন ভালো মা। যারা ধর্মহীন এবং নিষ্ঠুর তাদের প্রতি সহিংসতা, শাস্তি এবং রক্তপাতের পক্ষপাতী, যার অর্থ এই যে তিনি তাদের কাছে সমস্ত সহিংসতার জননী। তাকে হিংস্র এবং ভয়ানক হিসাবে দেখা হয় তবে তার সন্তানদের জন্য তিনি একজন সৌম্য মা।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর ষষ্ঠম রূপ হলো মা ছিন্নমস্তা । ছিন্নমস্তিকা এবং প্রচণ্ড চন্ডিকা নামে তাকে ডাকা হয় । তিনি মৃত্যু এবং ধ্বংসের পাশাপাশি জীবন, অমরত্ব এবং বিনোদনের প্রতিনিধিত্ব করেন।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর সপ্তম রূপ হলো মা ধূমাবতী, তিনি মহাশক্তির তথা মহামায়া দুর্গার একটি ভীষণা রূপ। ধূমাবতী বৃদ্ধা, কুৎসিত বিধবার বেশে সজ্জিতা ।

দশমহাবিদ্যয় দেবীর অষ্টম রূপ হলো মা বগলামুখী, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী যে ভক্ত দেবী বগলামুখী উপাসনা করেন সেই ভক্ত সমস্ত শত্রু থেকে দেবী বগলামুখী রক্ষা করেন এবং সে শত্রুদেরকে ধ্বংস করেন। দুর্গা সরস্বতী স্তোত্রতে তার কথা উল্লেখ আছে।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর নবম রূপ হল মা মাতঙ্গী,তাকে সঙ্গীত ও শিক্ষার দেবী সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ বলে মনে করা হয় । যেহেতু হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী মাতঙ্গী মা সরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ বলে মনে করা হয় সেই জন্য যে ভক্ত তার উপাসনা করে সে সংগীত, জ্ঞান এবং শিল্পকলার দিকে উন্নতি করে।

দশমহাবিদ্যায় দেবীর শেষ অর্থাৎ দশম রূপ হল মা কমলাত্মিকা । হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী কমলাত্মিকা হল মা লক্ষ্মীর তান্ত্রিক রূপ এবং যে ভক্ত তাকে ভক্তি ভরে স্মরণ করেন সেই সেই ভক্ত সুখ সমৃদ্ধির অধিকারী হয়।

দশমহাবিদ্যার দেবী পার্বতী ১০ রকম শক্তির দ্বারা ও রুপের দ্বারা পরিচিত , যখন জগতে প্রলয় অথবা অসুরের আক্রমণ হয় তখন দেবী তার ১০ রকম রূপ দাঁড়া জগত সংসার কে রক্ষা করে থাকেন। দেবীর দশমহাবিদ্যার ১০ রকম রূপের মূল কান্ডারী হল দেবি কালী ,এবং তার মাধ্যমে দেবীর নটি রূপ অধর্মকে নাশ করার জন্য সৃষ্টি।

হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ আছে বলির কথা, অর্থাৎ বলি বলতে এখানে নিজেদের মধ্যে থাকা কাম , ক্রোধ,লোভ,মোহ এবং অহংকারের বলি দেবী পছন্দ করেন।

যে সকল ভক্ত দেবীকে উৎসর্গ করে কাম , ক্রোধ,লোভ,মোহ এবং অহংকারের বলি দিতে পারবে, সেই সকল ভক্তরা জগত সংসার এবং মায়া থেকে মুক্ত হতে পারবে। সেই সকল ভক্তরা পরম জ্ঞানের অধিকারী হন যারা দেবিকে তুষ্ট করে নিজেদের মধ্যে থাকা অসুরের বলি দিতে পারেন।