থানায় কালীপুজো হয় কেন?
তমাল সাহা

থানা কি কালীক্ষেত্র! সেখানে কালীপুজো হয় কেন? থানা শব্দটি যে শোনেনি সে এখনো মাতৃগর্ভে।
কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো হবে সকলেই জানে। কাঁচরাপাড়া রেল কারখানা তো বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য বিখ্যাত। সব মায়েরা জানে বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করতে হয়। আলতা সিঁদুর গয়নাগাটি ঘরের মেয়েরা পরবে, ধানের ছড়া, লক্ষ্মীর ঘট-ঝাঁপি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, পিটুলিগোলা আলপনা, সেসব এক এলাহি ব্যাপার! স্কুলে সরস্বতী পুজো হবে। কিশোর কিশোরীদের প্রেমপর্বের সূচনা হবে, সকলেই জানে।

তবে থানায় কালী পুজো হবে কেন? মা কালী আর জায়গা পেল না গাঙ্গেয় উপত্যকায়, থানাতে সে কেন ঘাঁটি গাড়লো? শালা, দেবী বটে! এই দেবী নিয়ে নাকি বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন বড় মাপের সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারও
মাগীটাগী না যেন কী বলেছিলেন রামকৃষ্ণ দেবের কাছে! এসব লেখা আছে সুনীলের “প্রথম আলো” উপন্যাসে।
শুনছি এক মহিলা সাংসদ যে বিপাকে পড়েছেন তা মা কালীর কোপে। দেখ বেটি এখন কেমন লাগে?
পাল্টা দিয়েছিলেন এক মহিলা সাংসদ। কালীপুজোয় মহিলা পুরোহিত ও মহিলা ঢাকি এনে পুজো সম্পন্ন করেছিলেন।

শুনেছি রঘু ডাকাত তো বটেই সব ছোট বড় ডাকাতরাই কালীপুজো করতো। তোমার কাঁচরাপাড়াতে তো ডাকাতে কালীবাড়ি আছে।
এখন প্রশ্ন পুলিশইবা এত দেব-দেবী ছেড়ে কালীকে ধরতে গেল কেন?

সেদিন অমাবস্যার রাত নটবর ঘাটে গিয়েছি। নটবর ঘাট তো শ্মশানঘাট। একদিকে কালীপুজো হচ্ছে অন্যদিকে চিতা জ্বলছে। আমি এক তান্ত্রিকের সঙ্গে কিছুক্ষণ বাংলা মদ গিললুম। তান্ত্রিককে বলি থানায় কালী পুজো হয় কেন?
তান্ত্রিক বলে, শুনেছি তুই লেখাপড়া করেছিস। তা তুই গবেট না নির্বোধ?
কালী মহাকালী এই একমাত্র আদ্যাশক্তি, আদিমতার প্রতীক, প্রকৃতির প্রতীক। প্রকৃতি মুক্ত নগ্ন। তাই কালীও লগ্ন। এটা শুদ্ধ নগ্নতা। এই এক বিশাল নির্গুণ তান্ত্রিক আমি জীবনে পেয়েছি, তার বিদ্যাবুদ্ধি সব উপচে পড়ছে। সে আমাকে বলে, এই কালীর উলঙ্গতা নেই। তুই দেখবি এই কালীর পুরুষ্টু স্তন দেখলেও তোর মধ্যে সেক্স জাগবে না। আর দেখবি মহাকালীর জন্মস্থান দেখা যায় না। হাতের মালা দিয়ে আচ্ছাদিত। আমি বলি,আচ্ছাদিত কেন?
তান্ত্রিক বলে, ওই স্থানটিতেই তো পৃথিবীর জন্ম। তা সবসময়ই গুপ্ত রহস্যময় রাখতে হয়। না হলে এর গুরুত্ব কমে যাবে! এই অঙ্গটি খেলো হয়ে যাবে।
আমি বলি ওসব ছাড়ো থালায় কালী পুজো হয় কেন সেটা বলো।

দেখবি সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত, গভীর রাত পুলিশের ডিউটি। এই সময় কাল নিয়ন্ত্রণ করেন কালী। কালীর চারটি হাতের দুটির একটি অভয় মুদ্রা আরেকটি বর মুদ্রা। মুদ্রা মানে কি জানিস তো তুই? কালী বলছে, হাতে অভয় বর দিচ্ছি যত পারিস মুদ্রা তুলে যা। আমি বলি, তাহলে অন্য দুই হাতের এক হাতে যে খড়্গ, অন্য হাতে নরমুণ্ডু, সেটা কি?
তান্ত্রিক বলল, তুই কি কিছুই শিখিস নি? স্পষ্টতই মা কালী বলে, বেগড়বাই দেখলেই হাতের অস্ত্র মানে রিভলবার দিয়ে সটান গুলি করে দিবি। মাটিতে পড়ে থাকবে লাশ। খড়্গ রিভলভার এবং নরমুণ্ডু নিহত লাশের প্রতীক।

তান্ত্রিক বলে মায়ের দুই কষ বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে দেখবি। এই রক্তের একটা অর্থ আছে। তার মানে তুই রক্তপাত ঘটিয়ে সঠিক কাজই করছিস। আমি বলি, তাহলে মা মহাকালী জিভ কেটে আছে কেন?
তোর পড়াশোনা কতদূর? শোন্ ওই নির্গত লেলিহান দীর্ঘ জিভ হলো লেহন লালসার প্রতীক অর্থাৎ প্রলোভন লালসা কামনা কোন অন্যায় নয়।
পঞ্চ ম- কারে মায়ের পুজো করতে হয়। ম মানে জানিস তো? যেখানে যেখানে ম পাওয়া যায় সেখানে সেখানেই পুলিশের দাদাগিরি।
ম-য়ে মুদ্রা মাল এবং মা। মানে এসবের সঙ্গে মায়ের সরাসরি যোগ। দেখবি থানায় দক্ষিণা কালীর পূজা হয়। দক্ষিণা মানে জানিস তো! দক্ষিণা ছাড়া কি থানার কোনো কাজকর্ম হয়?
কালীপুজোর সময় দেখবি থানায় এই রেকর্ডটি বারবার বাজানো হয়! সকলই তোমারি ইচ্ছা ইচ্ছাময়ী তারা তুমি… তার মানে পুলিশ যা করছে মা তারার ইচ্ছেতেই করছে।

একথা শুনেছিস তো, অনেকেই বলে মনস্কামনা সিদ্ধির জন্য মায়ের থানে পূজো দিয়ে এলাম। ওই থান থেকেই থানা শব্দটি এসেছে। থানায় কোনোদিন যাসনি নাকি? পুলিশকে পুজো দিসনি?

মা কালীকে নিজের পক্ষে রাখতে,মাকে মর্যাদা দিতে পুলিশকেও থানায় পুজো করতে হয়। এবার বুঝেছিস তো থানায় কালীপুজো হয় কেন?