আজ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন। এই বাংলা তুমি দেখো নাই!
তোমাকে খুব মনে পড়ে
তমাল সাহা
এখন তোমাকে খুব মনে পড়ে
যখন বসিয়া রহিয়াছি
ভেঙে পড়া বটের ছায়ায়।
দেখিতে পাইনা আর
বন কলমীর ঝোপ,
দীর্ঘ শিরীষ, মেহগনির ঋজু শরীর।
খন্ড বিখন্ড তাহারা
পড়িয়া আছে বিশাল প্রান্তরে।
সার সার দাঁড়ায়ে রহিয়াছে
লৌহ কংক্রিটের সোমত্ত মস্তান।
একে একে ভাঙিতেছে প্রকৃতির উদ্যান।
ফ্ল্যাট শব্দটি পাই নাই
তোমার কবিতার ভিতর।
ক্যাম্প শব্দটি পাইয়াছি,
ডিটেনশন ক্যাম্প শব্দটি শুনি নাই।
এখন কোনোকিছু মাথানিচু নয়,
সব উঁচু উঁচু, নিকট বলিয়া কিছু নাই।
যুদ্ধ মন্বন্তরের কথা লিখিয়াছো তুমি
স্বাধীনতার আগে।
নারীর শরীর নিলাম হয় যুদ্ধের বাজারে।
এখন নারীমাংস আরও উপাদেয় হয়ে ওঠে
ধর্ষণের পর আগুনের প্রহারে।
এইসব তুমি দেখো নাই,
দেখিয়াছ জলঙ্গী কপোতাক্ষ ইছামতী।
এইসব এখন ভরাট,মরাস্রোত,বালিখাদানে।
মুদ্রা ও মোহর কাহাদের কোমরের খুঁটে।
রাষ্ট্রই এখন দেশ বেচে,
আমাদের কপালে কী জোটে!
রূপশালী ধান, নবান্নের আলপনা
আঁকা ছিল উঠানের আঙিনায়।
হেমন্ত, শীত, বসন্তের কথা
লেখা ছিল পাতায় পাতায়।
কতসব পাখি শালিখ, দোয়েল
সোনালী ডানার চিল
অদ্ভুত সব কুজন কলরব শেষে
অস্তগামী বেলায় পাখায় ম্রিয়মাণ আলো
শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফিরে আসে।
রাত্রে এখনও একটি দুটি করে নক্ষত্র জ্বলে
ফুল হয়ে ফুটে ওঠে আকাশে।
রূপাজীবীরা লাইনে দাঁড়ায়
জীবিকার সময় হয়ে আসে।
নারীদের কথা লিখিয়াছ তুমি
আকাশলীনা সুরঞ্জনা সুদর্শনা।
শীতের রাতে হিম ঝরে
বিনিদ্র রাত জাগে
নাগরিক পরিচয় খোঁজে
রোশেনারা, জাহানারা, সুহিতারা—
কন্ঠে শুধু আশ্রয়ের কথা।
কবেকার অন্ধকার নামিয়া আসিয়াছে
তাহাদের মুখের উপর।
দূরে শ্মশানে চিতা জ্বলে
চিরাগে আলোকিত স্তব্ধ কবর।
তুমি বলো ,তুমি তো জীবনানন্দ
কবে আসিবে নতুন খবর!