পুরো রাজনীতি, সমাজ বাস্তবতা, মানুষের জীবন যাপনের কথা, দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি– সব ছিল তার মাথায়।
আজ তাঁর জন্মদিন দেবেশ রায়

তিস্তাপারের লোকটি
তমাল সাহা

লোকটি সাধারণ মানুষের মতো
পার্টি করত, রাজনীতি ছিল তার মাথায়।
দলতন্ত্র উপেক্ষা করে
মানুষের জীবন বুননের কাজ করে যায়।

যান্ত্রিকতার বিপক্ষে
মানবিকতাকে করেছিল আশ্রয়—
জীবন গড়ে তুলেছিল
চা বাগান শ্রমিকের পাহারায়
ডুয়ার্সের অরণ্য সংকুল গাছপালায়।

লোকটি লোকটির মতো ছিল
তিস্তা নদীর পারে ছিল বসত।
রাজবংশী সম্প্রদায়ের কাছে পেয়ে গেল যাপিত জীবনের রসদ।

লোকটি বাঘারুকে দেখায়,
মাদারির সঙ্গে গেঁথে দেয় তার জীবন
শারীরিক বিভঙ্গে নির্মাণ করে শোষণ, পাশাপাশি তার প্রতিবাদী মনন।
নদী ব্যারেজ-ব্রিজ বানায় কারা
এতো জীবন সংহার, এক নয়া হনন!

লোকটি ইতিহাস ভূগোলের সঙ্গে
জীবন বিজ্ঞান মেশায়
রাষ্ট্র, মানুষ ও অধিকারের প্রসঙ্গে
দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক দেখায়।

লোকটির লিখন—
গল্প উপন্যাসের নামকরণ সেসব পুরাণের সরণি যেন
যযাতি, তিস্তাপুরাণ সঙ্গে থাকে
মানুষ খুন করে কেন, আপাতত শান্তি কল্যাণ হয়ে আছে
তার সঙ্গে জড়িয়ে যায়
সাম্প্রতিক সাংবিধানিক এজলাস
সময় অসময়ের বৃত্তান্ত—
এক নিজস্ব প্রতিবেদন।
উপাখ্যানের সঙ্গে থাকে বিকল্প আদর্শ এবং আধুনিকতার প্রত্যাখ্যানের ছবি,
জীবন যুদ্ধের কাহিনী।
লেখক হয়ে সে গঠন করে যেন এক নতুন বাহিনী।

লিখনে ছক ভাঙে সে—
কখনো সোজা উচ্চারণ
কখনো বা গদ্য পদ্য প্রবন্ধের মতন।
ভাবাবে তোমাকে বরিশালের যোগেন মন্ডল
কেন আখ্যানের নাম নিরস্ত্রীকরণ!

দুটো লোক পেয়েছি জীবনে
তারা বলে গেছে
প্রতি রোজ মেতে থাকো লিখনে।
না লিখলে কলমের নিবে ধরে যাবে জং
কাগজে-কলমে থেমে যাবে দ্বান্দ্বিক ঘর্ষণ।
জীবন বিশাল, ঘটনা প্রচুর—
মানুষের জন্য, শুধু মানুষের জন্য
তোমাকে লিখে যেতে হবে প্রচুর।

কেমন আছেন দেবেশ দা—দেবেশ রায়!
লিখছেন নাকি
রাষ্ট্রীয় চিন্তায় কোনো নতুন অধ্যায়?
তোমার কথা এখনো আমার মনে পড়ে যায়।
শেষ দেখা হয়েছিল কলকাতায়
কবি মণিভূষণের স্মরণসভায়।