তাহলে বাঙালি জেগে আছে!
তমাল সাহা

কাজী, নজরুল, ইসলাম– এই তিনটি শব্দের ব্যঞ্জনা ও তাৎপর্য যারা জানেন তারা নিশ্চিত নজরুলকে চেনেন।
বিদ্রোহী ধূমকেতু টর্পেডো ভীম ভাসমান মাইন– এসব শিরোপা সম্মান পৃথিবীর একটি কবির পক্ষেই প্রযোজ্য।
পরাধীন ভারতবর্ষের তিনিই একমাত্র কবি, যিনি কবিতা লেখার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং জেল খেটেছিলেন।

কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট– এই পংক্তির মধ্যেই নজরুলের জোশ মেজাজ হিম্মত সাহস চেতাবনি বোঝা যায়। কবিতাটি লেখার সময়কাল মারাত্মক। তাঁর চিন্তা-চেতনা ঋজুতার সঙ্গে রহমান সাহেবের এই সুর আমাদের ধাতে সইবে না।
তবে এই সুর, ভাঙা উচ্চারণের মধ্যে একটা লোকশিল্পজ ভাব আছে আমার সাধারণবোধে। আমি সিনেমাটি দেখিনি। সিনেমার আবহে পরিবেশে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাটি উত্তীর্ণ হতে পেরেছে কিনা আমি জানিনা।

আমি গানের লোক নই, মেশিন গানের লোক। তবে এর ভালোমন্দ বা মন্দ না ভালো সেই বিষয়ে আমি যাচ্ছি না।।
আমি যাচ্ছি অন্য বিষয়ে। বাঙালি জেগে আছে, বাঙালিত্ব বোধ তার আছে তারা ফুঁসে উঠেছে এবং অনেক প্রাজ্ঞজন এতে শামিল হয়েছেন। তাঁরা প্রণম্য।

এইসব সুরসাধক বুদ্ধজন ধ্রুবপদ রচনা করেন। সাধারণ শ্রোতা মানুষ তাঁদের মর্যাদা দেন।
বিশ্বের ধ্রুপদী সন্তান প্রজন্মেরা যখন পথে বসে থাকেন, শাসক দ্বারা তারা যখন অত্যাচারিত হন এবং হয়ে চলেছেন শাসক যখন তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তখন কিন্তু এই প্রাজ্ঞজনেরা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ফুঁসে ওঠেন না।

নজরুল তো দেশপ্রেমী ছিলেন, দেশের জন্য ভাবতেন, প্রজন্মের জন্য ভাবতেন। প্রজন্ম তো ‘কারার ঐ লৌহ কপাটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন’ এই গর্জানো প্রাজ্ঞজানেরা ‘ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট’ এমন প্রতিবাদী সুর কখনো বর্ষণ করেছেন কি?

এই দুদিন আগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিমূর্তির গলায় দড়ি বেঁধে যখন প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছিল তখন এই বিদ্রোহী প্রাজ্ঞজনেরা কেন গর্জে ওঠেননি? এর কৈফিয়ৎ কে দেবে?