টুকরো! ভারতবর্ষ! তার বুকে এখন অজস্র রক্তপাত। ‘টুকরো’ এমন একটি শব্দ উত্তর-পূর্ব গোলার্ধের এই ভারতবর্ষের বাতাসে ক্রমাগত হিংস্র নৃত্য করে যায়…
পণ্ডিত ব্যাকরণবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর টুকরো শব্দটির অন্তর্নিহিত অর্থটি বুঝেছিল কী হায়!

টুকরো শব্দটি এবং বিদ্যাসাগর

তমাল সাহা

এক টুকরো মাংসের জন্য সেই কুকুরটি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল পথের ধারে একটি মাংসের দোকানের দিকে। উল্টো করে ঝুলানো ছিল ছাল ছাড়ানো পাঁঠাটি। কখন এক টুকরো মাংস ছিটকে এসে পড়বে রাস্তায়।
ছিটকে পড়ে আকাঙ্ক্ষার সেই মাংসের টুকরো। দ্রুত মুখে তুলে কুকুরটি দৌড়ে পালায়।
কসাই তো নিষ্ঠুর বড়, ছুঁড়ে মারে তার তীক্ষ্ণ ধারালো চপারটি কুকুরের গায়।

লোভের প্রবৃত্তি কতদূর যেতে পারে?
শেষ পর্যন্ত কুকুরটি সাঁকো পেরোতে গিয়ে পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনাকে ষোল আনা করতে চায়,তাও হারায়।
এই পর্যন্ত পড়েছিলাম ঈশ্বরচন্দ্রের কথামালায়।

ঈশ্বরচন্দ্র শিক্ষাবিদ,
বিদ্যাসাগর হয়েছিলেন বটে কিন্তু ভারতবর্ষের ছবি যে লুকিয়ে আছে ‘টুকরো’ শব্দটির ভিতর তা তিনি কোনমতেই বুঝতে পারেননি, হায়!

ভারত দু টুকরো হবে মধ্যরাতে–
সেই ছবি অধরা ছিল তার কাছে, তার বৌদ্ধিক চিন্তা চেতনায়।
দাঙ্গায় কারা কত টুকরো হয়েছিল কে জানে?
নারীদেহ কত টুকরো হলে মনের হিংসা শান্তি পায় কে জানে, পঞ্চাশ ষাট একশো….
সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে মিলবে অজানা ছিল তাঁর।
স্বাধীন ভারতবর্ষের দক্ষিণ মহাসাগর তীরে দাঁড়িয়ে তিনি এখন পড়ে গেছেন ভীষণ সমস্যায়।

টুকরো! টুকরো! টুকরো টুকরো! এমন কঠিন কঠোর হিংস্র শব্দ এত সহজে পাওয়া যাবে তিনি আদৌ বুঝতে পারেননি।
সেই শব্দটি এখন জলবায়ু ভারী করে বাতাসে ঝড়ো সঙ্গীতের মতো ভেসে বেড়ায়…

শেষেবেলায় তাঁর শ্মশানযাত্রায়
বোধ করি চার টুকরো মানুষেরও খুঁজে পাওয়া হয়েছিল বড় দায়!