বিনয় ভরদ্বাজ,অবতক খবর, সংবাদদাতা, ৩রা মে ২০ ::  দেশজুড়ে করোনা সংক্রমনের মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। আর এই লকডাউনে সাধারণ মানুষের খাদ্য সংকট না হয় তার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দুই সরকারি আলাদা আলাদা ভাবে মানুষকে চাল, রেশোনে দেওয়ার ঘোষণা করেছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ রেশন অনুযায়ী প্রতিকার্ড পিছু ১০ কিলো করে চাল দেওয়ার কথা কিন্তু কিচ্ছু রেশন ডিলার মানুষকে তাদের বরাদ্দ মাল না দিয়ে তাদের মাল হজম করে নিচ্ছেন। আর এই অভিযোগে রাজ্যজুড়ে অভিযান চালিয়ে ১৯ জন রেশন ডিলারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শুধু এই ১৯ জন নয়, এছাড়াও যেখানে যেখানে কম মাল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অর্থাৎ বরাদ্দ থেকে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এমন রাজ্যে ২১৭ জন রেশন ডিলার কে শোকাজ করেছে খাদ্য দপ্তর।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই লকডাউন সময় যাতে মানুষকে না খেয়ে মরতে না হয়, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে,ফ্রি রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মানুষের এই ফ্রি রেশন হজম করে নিচ্ছে একশ্রেণী অসৎ দুর্নীতিগ্রস্ত রেশন ডিলাররা। এই দুর্নীতিগ্রস্ত দের কিছুতেই ছাড়া হবে না. তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ হলে তাদের রেশন ডিলার লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে পরিস্কার জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। খাদ্যমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন যেসব রেশন ডিলার লাইসেন্স বাতিল করা হবে তাদের ওখানে খাদ্য বিতরনে দায়িত্ব সামলাবেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা।

উল্লেখ্য লকডাউন বাজারে মুখ্যমন্ত্রীর ফ্রি রেশন দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই যত্রতত্র রেশন দুর্নীতি নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। বিরোধীরা দাবি তোলে যে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়েরা অর্থাৎ তৃণমূল কর্মীরা পার্টি অফিস থেকে রেশন বিলি করা শুরু করে দিয়েছেন। বিরোধীদের বারেবারে তোলা অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্দ হযে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই ব্যাপকভাবে ধমক দেন. শুধু মন্ত্রী কে ধমক দেওয়া নয় বরং খাদ্য সচিব মনোজ আগরওয়াল কে তার পদ থেকে সরিয়ে দেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কড়া পদক্ষেপের পরেও রেশন ডিলারের দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। এরপর বিরোধীদের হয়ে ব্যাট ধরেন রাজ্যের রাজ্যপাল জাগদীপ ধনখড। রাজ্যপাল কটাক্ষ করে বলেন যে লোক দেখানো কাজ না করে সত্যিকারে রেশন দুর্নীতি রোধ করার কাজ করুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান যদি এখন থেকেই এই দুর্নীতিগ্রস্তদের আটকানো না যায় তাহলে রেশন দুর্নীতি একদিন এত বড় দুর্নীতি হয়ে দাঁড়াবে যে সমস্ত দুর্নীতিকে পেছনে ফেলে দেবে।

রাজ্যপালের এই হুঁশিয়ারির পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো কড়া ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য খাদ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন দপ্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরেও রাজ্যজুড়ে রেশন দুর্নীতি এখনো অব্যাহত। গত শনিবারে জেলায় জেলায় রেশন দূর্নিতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের লালগোলা তে রেশন ডিলারের বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। শুধু তাই নয় গত পয়লা মে রেশন দুর্নীতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে হাসনাবাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।

খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন রাজ্যজুড়ে বিশৃংখলা তৈরী করার চেষ্টা করছে সিপিএম বিজেপি ও কংগ্রেস যৌথভাবে মিলেমিশে। তিনি বলেন রাজ্যের ৯ কোটি ৯৬ লাখ মানুষকে ফ্রিতে রেশন দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আর এ কথাটি তাদের হজম হচ্ছে না। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান রাজ্যবাসীকে বারেবারে অনুরোধ করে জানানো হয়েছে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে জানানো হচ্ছে যে প্রত্যেকেকার্ড পিছু সরকার পাঁচ কেজি করে চাল ফ্রি দিচ্ছে । তিনি বলেন বিরোধীদল গন্ডগোল পাকিয়ে রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু এটাও সত্যি কিছু কিছু রেশন ডিলার এধরনের বেআইনি কাজ করছেন। তাদের সরকার কিছুতেই ছেড়ে দেবে না।