স্বাধীনতার অমৃতোৎসবের কবিতা, একটু পড়ে দেখতে পারেন।

গরিবদের নিয়ে কবিতাঃ ধ্রুব পদাবলী
তমাল সাহা

কবিতা লেখার মত সহজ বিষয় কিছুই নেই।
আর গরিবদের নিয়ে কবিতা লেখাও খুব সহজ। ওদের গোপন বলে কিছুই নেই।

গরিবদের বাড়ি কলিং বেল নেই, সুতরাং ওদের মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ে যখন তখন ঢুকে পড়া যায়।
ওদের খাট নেই ডাইনিং টেবিল নেই, বসার চেয়ার নেই। তবে ওদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায়।
ওরা প্লাটফর্মে ফুটপাতে শোয়। ওদের অন্দর বাহির সব দেখা যায়।

গরিবদের সন্তানাদি বেশি হয়। গরিব ছেলেমেয়েদের মাথায় ঝাঁকড়া চুল থাকে। সজোরে টানলেও ওদের চুল ওঠে না।
ওরা বিজ্ঞাপনী কেশতৈল,প্রসাধনী মাখে না। ওদের বিউটি পার্লারে যেতে হয় না।

ওদের জন্য কোনো মেটাফর লাগে না। ‌
পাখির নীড়ের মতো চোখ, শঙ্খ স্তন, বুকে বিভাজিকা, চন্দনের গন্ধ, বা কালিদাসের মেঘদূত –এসব বর্ণনা ওদের ক্ষেত্রে খাটে না।
ওরা নিজেরাই এক একটা ভাস্কর্য, চিত্রকল্প তো বটেই।

আমি নারীর স্তন অন্ধকারে গোপনে দেখেছি।
গরিব মেয়েদের স্তন নেই, ওদের ব্লাউজ ছেঁড়াখোঁড়া থাকে,ফলে ওদের চুপসানো মাই সবসময় দেখা যায়।দেখলেও কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।
সায়া বুকের উপর তুলে গিঁট দিলেই মেয়েদের ম্যাক্সি হয়ে যায় আর পুরুষদের লুঙ্গিই সর্ব ক্রিয়াশীল পোশাক।

বেশি ছেলেপুলে হলে গরিবদের খুব লাভ।
গরিবের বাপ বলে, বাচ্চাগুলোকে সকাল সকাল ছেড়ে দিই,অত হাতে ভিক্ষে চাইলে যা পাওয়া যায় তাতে আমাদের দিনের অন্ন সংস্থান হয়েও কিছু উদ্বৃত্ত থাকে।

গরিবের মা বলে, দুই একটা ছেলেপুলে বেশি হলে ক্ষতি কি? হ্যাঁ, ওদের বাপ তো ঠিকই বলেছে। আমাদের কষ্ট তো আছেই। দুই একটা ছেলেপুলেতে কষ্ট আর কত বেশি হবে ? শুধু আমার একটু কষ্ট বাড়বে। রান্না করে অত গুলান পেটে ভাত তো দিতে হবে!

গরিবের বাপ বলে, কনডোম না কি যেন ওসব নাম শুনেছি, ওসব আমাদের লাগেনা। ওসব বড়লোকদের ব্যাপার‌। এখানেই ওদের সঙ্গে আমাদের ফারাক।
তবে মিল তো এক জায়গায় আছেই প্রজনন, প্রক্ষালন ও পেটের খিদেতে-সেটা তো একই রকম, আপনি কি বলেন? ওদের নার্সিংহোম লাগে।প্ল্যাটফর্মে শাড়ির আড়াল দিয়েই আমাদের নার্সিং হোম মানে ওই সোজা বাংলায় আমাদের আঁতুড়ঘড় হয়ে যায়।

শেষ ট্রেন চলে গেলে গরিব স্বামী-স্ত্রীদের মনে আনন্দ জেগে ওঠে।
কারণ তখন প্ল্যাটফর্মে লোকজনের চলাচল কমে আসে। চারদিক নির্জন হয়েয়যায়।
চরম গ্ৰীষ্মেও শরীর চাদরে ঢেকে ঘেমে নেয়ে ওরা সঙ্গম করে। বর্ষাকালে সঙ্গমে একটু ভয় কম। বৃষ্টিতে ভিজে যাবার ভয়ে মানুষ প্লাটফর্মে থাকে না। তবে শীতের সঙ্গমে ওরা বেশি সুখ পায়। ছেঁড়া কম্বলের ওম ও শরীরের উষ্ণতা একাকার হয়ে যায়।

গরিবরা বলে গরিব না থাকলে পৃথিবীতে কবিই জন্মাতো না। গরিবকে পণ্য করে কবিতা লিখলে বাজারে খুব চলে।

গরিবরা কাউকে গালি দেয় না, বড়লোকদেরও ওরা ঘৃণা করে না।
ওরা বলে, বড়লোক মানুষদের হাতে পয়সা আছে।এখনো অনেক মানুষের মূল্যবোধ আছে। দয়ামায়া আছে। তাইতো তারা হাত পেতে ভিক্ষে করে কোনমতে হলেও খেয়ে বেঁচেবর্তে আছে।

গরিবরা বলে, গ্যালিলিওরও অনেক আগেই আমরা জানতাম পৃথিবী ঘোরে।
শুধু শুধু উনি রাষ্ট্রের হাতে নিগৃহীত হলেন। যন্ত্রণা ভোগ করলেন। তাঁর চোখ অন্ধ হয়ে গেল।

আমরা আগেই জানতাম, পৃথিবী ঘোরে বড়লোকদের দিকে।