অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন
গণতান্ত্রিক মহোৎসবঃ কালিয়াগঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর শুক্রবার ২১এপ্রিল ২০২৩
তমাল সাহা
চিতাভস্ম উড়ায়ে বৈশাখ মাস এসে গেছে।নদীপারে বর্ষশেষের সূর্যাস্তের ছবি তুলতে বাঙালির মুন্সিয়ানা আছে। সূর্য নদী জলে প্রায় ডুব দিয়েছে।
ফেসবুকের ওয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যাস্তবেলার ছবি। সূর্য অমর। জলে ডুব দিলেও মরে না। সূর্য গেরুয়া শাড়িটি আকাশে ছড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমে ডুব দেয়। পরদিন ভোরে আবার পুব আকাশে নতুন শাড়ি পরে ভেসে ওঠে।
আকাশের দিকে তাকালে এখন লাল ফুলের সমাহার।আমার মা বলেছিল, যত রক্তপাত খুন হয় মাটিতে সেই সব রক্ত শুষে নিয়ে পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া মাথায় রক্তাভ ফুল নিয়ে ফোটে।
মা আমায় একটু বিশদভাবে বলেছিল। মা আমাকে ঘটনা প্রবাহ দেখে কত কী যে শিখিয়ে গিয়েছে! মা বলতো এইসব রক্ত হচ্ছে তাদের রক্ত, শহীদদের লড়াকুদের রক্ত যারা গুলি খেয়ে মাটিতে পড়েছিল, এইসব দাঙ্গা হানাহানির রক্ত, এইসব ধর্ষিতা নারীদের রক্ত যারা দেশ বিভাগের শিকার হয়েছিল, যাদের উপর বলাৎকার করা হয়েছিল।
উত্তর দিনাজপুর জেলায় রাজবংশীরা থাকে। রাজবংশী শব্দটিতে আভিজাত্য আছে।তারা রাজবংশী হলেও সমাজে পিছিয়ে পড়ে থাকে। মেয়েটি থাকতো কালিয়াগঞ্জ সাহেবঘাটা গাঁয়ে। বাড়ির অদূরে একটি পুকুর ছিল। পুকুরে ডুবে থাকা সূর্য বা চাঁদ নয় ভেসে উঠলো মৃত শরীর কিশোরীর, শুক্রবার ভোরে। আগের দিন ছিল লক্ষ্মীবার– বৃহস্পতিবার।
কিশোরীটিকে হয়তো বা কেউ নষ্ট করেছিল। কেউবা করেছিল খুন। রক্ত তো ঝরে ছিল নিশ্চয়ই। সে রক্ত কোথায় এখন? পুকুর পাড়ের ঘাস জিভ দিয়ে চেটে খেয়েছিল কী সেই রক্তধারা অথবা জল রক্ত মিশে খেলা করেছিল পুকুরের স্রোতে!
সব ঘটনা দেখেছিল সেই রাতের চাঁদ সেই বলতে পারে। রাতের সব ঘটনার নীরব সাক্ষী থাকে চাঁদ, মা আমাকে জানিয়েছিল, সে তো তোমাদের বলেছি অনেক আগেই। মা-ই তো বলেছিল, রক্ত কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে আর গাছের ফুল হয়ে ওঠে!
তারপর আরো ইতিহাস। একটি মৃত মেয়েকে নিয়ে ছ’জন পুলিশ হিম্মতদারী খেলা দেখায় প্রকাশ্যে। মৃতনারী তার আবার মর্যাদা! টেনে হিঁচড়ে পা ঘষটায় মেয়েটির রাস্তায়। মেয়েটি তখন রাষ্ট্রীয় সেবক-নিরাপত্তা রক্ষীদের বলয়ে।
মৃত গণতন্ত্রকে নিয়ে পুলিশ দ্রুত দৌড়ে চলে। খরতপ্ত রৌদ্র তখন মৃত কিশোরীর মুখের উপর ঝুকে পড়ে। বলে, ভাগ্যিস মরে গেছিস না হলে নিশ্চিত আরেকবার ধর্ষিতা হতিস, বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছিস।