দাঙ্গার পর চলে খোঁজের পালা।কে কোথায় পড়ে আছে, কিভাবে।কারা মরে?
কি ছিল তাদের অপরাধ? কে উত্তর দেবে তার? চতুর্দিক শুনশান, নির্বিকার!
খোঁজ
তমাল সাহা
দিনভর হত্যালীলা চলার পর
রাত্রি খুব ঘন হলে লোকটি বেরিয়ে পড়ে একটি টর্চ শুধু তার হাতে।
লোকটি একের পর এক বধ্যভূমির দিকে হাঁটে। প্রথমেই সে দেখে পড়ে আছে একটি দেহ। টর্চ জ্বালতেই ভেসে ওঠে নারীমুখ।
এ তো সেই ফুলমাসি! রোশেনারা! মুসলিম হয়েও পুজোর ফুল বেচে পেটের দানাপানি জোগাড় করতো।
— কোন্ মালা নেবেন বাবু! গাঁদা- জবা- বেল ফুলের মালা? না, আজ তো শিবরাত্রি। নীলকন্ঠ ফুলের মালা! এই নিন।
সে দেখে একটু দূরে একটি বাক্স উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পড়ে আছে আরেকটি মানুষ।
মুখটি সোজা করতেই দেখা গেল তালাচাবি সারাইওয়ালার মুখ।
—পুরানা তালা… চাবি…. সারাই…ই…ই…
অনিকেত যে, সে অন্যের ঘর খোলা-বন্ধের তালাচাবি বানায় কিভাবে!
পরপর সে দেখতে পায়
রিক্সাচালকের নিথর দেহ।
মনে পড়ে, দিন মজুর মানুষটি বলেছিল,
আমি চিনি,ওই তো শহিদনগরে শালুক পুকুরের পাশে আপনার বাড়ি।
এরপর সে দেখতে পেল
স্টেশন-চাতালে পড়ে থাকা কুলিটির রক্তাক্ত শরীর,কোপানো দাগ।
চটকল গেটের কাছে পড়ে আছে কামগারের সোমত্ত ডেড বডি।
মসজিদের পাশে পড়ে আছে লাশ।
মন্দিরের সামনে পড়ে আছে মৃতদেহ।
সে একটির পর একটি দেহ খুঁজে ফেরে। এতো মৃত্যুর স্তূপ!
সে খুঁজে পায় না কোনো নেতার দেহ।
ধর্মযুদ্ধ! এতই নিপুণ
কোনো কালে কোনোদিন কোনো নেতা
হয়না তো খুন!