অবতক খবর,৩১ ডিসেম্বর: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে গোষ্ঠী কোন্দল তুঙ্গে। বিধায়ক সাংসদের বিরুদ্ধে বলছেন,অন্যদিকে সাংসদ বিধায়কের বিরুদ্ধে বলছেন। এই নিয়ে সরগরম ব্যারাকপুরের রাজনীতি। তবে এইসবের মধ্যে বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এবং জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন সাংসদের বিরুদ্ধে। কিন্তু হাল ছাড়েননি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনিও একের পর এক অভিযোগ তুলতে শুরু করেন তাদের বিরুদ্ধে। কেউ বললেন হলুদ ফাইল, আবার কেউ বললেন লাল ফাইল। কেউ বললেন দল বুঝে নেবে, আবার কেউ বললেন মানুষ জবাব দেবে। জনসমক্ষে চলে এসেছে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর এই নিয়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠকও হয় দলের অন্দরে সংঘটিত হয় কোর কমিটির মিটিং। কিন্তু এই বৈঠক এবং কোর কমিটির বৈঠকেও কোন সুরাহা হয়নি। যে সময়ে কোর কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছিল সেই সময়ে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এই কোর কমিটিতে ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন নির্মল ঘোষ তাপস রায়,চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। কিন্তু কোর কমিটির শাসানীর পরেও সাংসদ এবং বিধায়কের লড়াই থামেনি। আর এখানেই সুযোগ নিয়ে নিয়েছে বিরোধীদল বিজেপি।

এই সবের মধ্যে সাংসদ অর্জুন সিং এক দলীয় মিটিংয়ে বলেছিলেন যে, এই সকল ঘটনার কলকাঠি নাড়া হচ্ছে নৈহাটি থেকে। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, নৈহাটি থেকে ইনজেকশন নিয়ে মুরগা কুকুরু কু করছে। সাংসদ নাম না করলেও সাধারণ মানুষ এবং দলের নেতাকর্মীরা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে তিনি কার কথা বলতে চাইছেন। সকলেই বুঝতে পেরেছেন যে, সাংসদ নাম না করে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের কথা বলতে চাইছেন অর্থাৎ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক সমস্ত কলকাঠি নাড়ছেন। কিন্তু সরাসরি নাম করে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ আনেন নি সাংসদ। তবে তিনি সরাসরি মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সুবোধ অধিকারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের এই রেশ থামেনি। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিলেন যে এই বুঝি বড়সড়ো কোন গন্ডগোল বাঁধলো! তবে সেরকম কিছু হওয়ার আগেই ময়দানে নেমে পড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার চাকলায় যে কর্মীসভা হয়েছিল সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী,বিধায়ক,সাংসদ সহ দলের কর্মীরা। সেই মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো কড়া বার্তা দেন যে, নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত লড়াই চলবে না। তিনি পরিষ্কার বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে,পুরনোদের সম্মান দিতে হবে। নিজেদের লড়াই নিজেদের মধ্যেই রাখতে হবে প্রকাশ্যে যেন না আসে। দলের জন্য কাজ করতে হবে দলকে বদনাম করলে চলবে না। বিজেপিকে সুযোগ দেওয়া যাবে না।

পাশাপাশি উক্ত দিনে সভা শেষে তিনি সাংসদ এবং বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন। সূত্রের খবর, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক,সাংসদ অর্জুন সিং, বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম , সুবোধ অধিকারী সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। জানা গেছে, সেই বৈঠকেও তিনি তাদেরকে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, আগামী ২০২৪ এ বিজেপি এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়তে হবে নিজেদের মধ্যে লড়লে চলবে না। তৃণমূলকে বদনামের চেষ্টা করা হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।

শুধু কড়া বার্তা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। নতুন কমিটিও তিনি গঠন করেছেন। নতুন এই কোর কমিটিতে রয়েছেন-নির্মল ঘোষ(চেয়ারম্যান),তাপস রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু,ব্রাত্য বসু চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,রথীন ঘোষ,নারায়ণ গোস্বামী,বিশ্বজিৎ দাস, মমতা ঠাকুর, সুকুমার মাহাতো, রফিকুল ইসলাম মন্ডল, হাজী নুরুল ইসলাম,বিনা মন্ডল, তাপস দাশগুপ্ত, গোপাল শেঠ,সুরজিৎ বিশ্বাস,এটিএম আব্দুল্লাহ রফিকুর রহমান। ‌

এই কোর কমিটির সদস্যরা প্রতিদিন তাঁকে আপডেট দিতে থাকবেন এমনই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ‌ আশ্চর্য বিষয়, এই কোর কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যিনি কাছের মন্ত্রী অর্থাৎ পার্থ ভৌমিক তিনি এই কোর কমিটিতে জায়গা পেলেন না।

সূত্রের খবর, যারা গোষ্ঠীদ্বন্দের সূত্রপাত করছেন এবং যারা এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইন্ধন যোগাচ্ছেন তাদের এই কোর কমিটিতে রাখা হয়নি। অন্যদিকে এই কোর কমিটিতে সাংসদকেও রাখা হয়নি।

তবে এই কোর কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা দেখে দলের অন্দরেই হইচই শুরু হয়ে গেছে। সকলে প্রশ্ন করছেন যে হঠাৎ পার্থ ভৌমিককে এই কোর কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল কেন? তবে শাসকদলের রাজনীতিতে কি এটি কোন নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত?

অন্যদিকে গত ৩০শে ডিসেম্বর নৈহাটি পৌরসভায় সাংসদ অর্জুন সিংকে নিয়ে সটান হাজির হন সুব্রত বক্সী। পৌরসভার অন্দরে ঘন্টাখানেক চলে রূদ্ধদ্বার বৈঠক। তবে সেই বৈঠকে বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সুবোধ অধিকারী কেউই উপস্থিত ছিলেন না। পৌরসভা থেকে বেরিয়ে সুব্রত-অর্জুন দুজনেই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। অতঃপর দুজনেই নৈহাটি উৎসবে চলে যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। সেখানেও দেখা মেলেনি দুই বিধায়কের। মঞ্চে সৌজন্যতা দেখালেও, অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাম না করে অর্জুন সিংকে বিঁধতে ছাড়েননি মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।