অধ্যাপক, গবেষক, লেখক সুধীর চক্রবর্তী জন্মেছিলেন ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪।চলে গিয়েছেন১৫ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে লোকসংস্কৃতি,বাউল- ফকিরের যাপিত জীবন রহস্য-তত্ত্ব,লালনের জীবন, রবীন্দ্রনাথ ও নির্জনতা নিয়ে তাঁর গবেষণামূলক রচনা বাংলাসাহিত্যে চিরকালীন সম্পদ হয়ে থাকবে।
কৃষ্ণনাগরিক
তমাল সাহা
জীবন সন্ধানে মেতেছে তুমি
বহুদূর বিস্তৃত সে বিচরণ ভূমি।
লোকসংস্কৃতি,বাউল ফকির তত্ত্বকথা
বসে রবীন্দ্রনাথ,পাশে নির্জনতা–
তুমি তুলে আনো অজানা রহস্য।
তুমি হে কৃষ্ণনাগরিক!
রেখে যাও পদচিহ্ন– নমস্য।
শীতের প্রহরে জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
কুয়াশার ভেতর দু একটি নক্ষত্র
ঝরে পড়ে মাটির দিকে।
কাকে খুঁজে তার পায়ের কাছে
পড়ে থাকতে চায় সেই পতনশীল নক্ষত্রটি?
মাটির মানুষের সঙ্গে
চলমান জীবনের সান্নিধ্যে
পৌঁছোতে চায়
সেই সৌর জাগতিক ঋক্ষমন্ডলের
কিছু কিছু অংশীদার।
মাটিকে ভালোবাসে যে
সে তো মানুষকে ভালোবাসবেই
চাষিপাড়া কলুপাড়া কুমোরপাড়া কামারপাড়া ধাইমাসি বাটনাবাটা মাসি
শিলপাটা কুটালার গান—
এসবের ঘনিষ্ঠ আয়োজনে মনন গড়ে উঠলে
মানুষটি পদাতিক থেকে পরিব্রাজকের পূর্ণতা পায়।
চোখ তো সকলেরই থাকে দৃষ্টি থাকে কজনের?
পথিক প্রজ্ঞা পর্যবেক্ষণ সম্পৃক্ত হলে
কোনো মানুষ খুলে দেয়
জীবন ঐশ্বর্যের জানালা কপাট।
পরিব্রজনের নেশায় মেতে উঠলে
মানুষ মাধুকরী ছাড়া আর কি চাইতে পারে?
এই যে বিচিত্র মানবজীবন
ফকিরনামা বাউল জীবনের মহিমা
দেহতত্ত্বের মধুরিমা সে তুলে ধরে আর
আমাদের জীবন শিক্ষক হয়ে যায়।
নির্জনতার মধ্যে কি খুঁজে পায়
ঋষিকল্প দ্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ
নির্জনতায় নৈঃশব্দের মধ্যে
যে শব্দ লুকিয়ে থাকে
সে আমাদের তার অন্বেষণে নিয়ে যায়।
পতিত মানবজমিনকে সেও আবাদ
করতে চায় কলমের ধারাভাষ্যে
সে তো আমাদের জন্যেই।
লোকজীবনের আধারে
সেও গেয়ে ওঠে গান
লোকসংস্কৃতিকে সে দেখে অনন্য দৃষ্টিতে
মানুষ চেনায় সে।
ভবের হাটে দুনিয়াদার এই
মানুষকে নিয়ে খেলা করে
আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয় ধ্রুবপদ।
জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা
সৌভাগ্য আমার! কোনোদিন
দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে কৃষ্ণনগরে
কোনো এক শারদ উৎসবের সম্বর্ধনার আয়োজনের কারণে।
তাকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলুম আমরা– আমি, অনুষ্ঠানের আয়োজক।
তিনি কথা দিয়েছিলেন
শরীরে জুত থাকলে তিনি অবশ্যই যাবেন
কিন্তু তিনি আসেন নি।আসতে পারেন নি।
আমার হাতে লেখা মানপত্র, একটি স্মারক এবং শাল
আমরা পৌঁছে দিয়েছিলাম তাঁর বাড়ি
এও এক ঘটনা হয়ে রইলো আমার জীবনে।