অবতক খবর,৪ জানুয়ারি: কুস্তিতে বাংলাদেশ কে পরাজিত করে ভারতের হয়ে গোল্ড সোনা জয় করলো উত্তর দমদম নিমতার অভিষেক,তবে এই লড়াইয়ের পিছনে অভিষেক সহ তার পরিবারের অদম্য জেদ ছিলো। নিমতার অভিষেক যেন আজ হয়ে উঠেছে বাস্তবের সুলতান।
দারিদ্রতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিনের লড়াইকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও নিজের মানসিক জেদ আর ইচ্ছা শক্তির দ্বারা সেই লড়াই জয় করে, আজ আন্তর্জাতিক স্তরে সাউথ এশিয়ান গেমসে রেসলিং /কুস্তিতে সোনার পদক ছিনিয়ে আনল বাংলার গর্ব অভিষেক গুপ্তা। দারিদ্রতার সংসারে ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনার গণ্ডিতে আটকে থাকলেও, বিটেক কমপ্লিট করে নিজের শরীর সচেতনতার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন জিমে। সেই থেকেই শুরু শরীর চর্চা। তবে সরকারি বেসরকারি দুই তরফে চাকরির চেষ্টা চালালেও, সেভাবে এখনো সফল হননি অভিষেক। বাড়িতে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, সংসার চালানোর তাগিদ থেকেই এরপর নিজেকে কিছু করে দেখানোর জেদ তৈরি হয় অভিষেকের মনে। আর সেই থেকেই কিক বক্সিং দিয়ে খেলার জগতে প্রবেশ। কিক বক্সিংয়ে ন্যাশনাল লেভেলেও যান বিরাটির এই যুবক। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এই যুবকের শরীর চর্চা ও খাদ্য তালিকায় তেমন কোন দামি খাবার জোটেনি কখনোই। তবু যেটুকু সামর্থ্য তার মধ্যে থেকেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছে সে। যে কথা বলতে গিয়ে রীতিমত চোখের জল অভিষেকের বাবা অভিজিৎ গুপ্তর চোখেও। সামান্য বেসরকারি কাজ করলেও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন বাড়িতেই থাকেন তিনি। ছেলের এই লড়াইয়ে মানসিকভাবে সঙ্গে থাকলেও আর্থিকভাবে তেমন কোন সাহায্য করতে পারেন না বলেও আক্ষেপের সুর বাবার গলায়। মা কাকলি দেবী অবশ্য গৃহবধূ। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়া বাড়িতেই দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে আজ যেন অভিষেকের সঙ্গে লড়াইয়ে ময়দানে তারাও। আন্তর্জাতিক স্তরে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে, ছেলে ঘরে ফেরায় রীতিমতো ছেলেকে ঘিরেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বাবা-মা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের মত ৮ টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশকে হারিয়ে সোনা জয় অভিষেকের। যদিও অভিষেক জানান 2022 ন্যাশনাল রেসলিং এ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই সময় জোটেনি পদক। তবে এবার, সাফল্য মিলতেই যেন আরও জেদ চেপে বসেছে রেসলিং এ বাংলাদেশকে হারানো এই খেলোয়াড়ের মনে। পরবর্তী লক্ষ্য ওয়ার্ল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে স্বপ্ন দেখলেও তা কতটা বাস্তব রূপ পাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে আশঙ্কার মেঘ। কারণ পরবর্তী পর্যায়ে এগোতে প্রয়োজন অনেকটাই অর্থের। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবন যুদ্ধে নিজের অবস্থার সঙ্গে লড়াই চালানো বাংলার এই রেসলারের কাতর আবেদন পাশে দাঁড়াক সরকার, মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়া দপ্তর। তাহলে বাংলার মুখ আরও উজ্জ্বল করতে পারবে বিরাটির এই যুবক অভিষেক গুপ্তা। খেলার পাশাপাশি সংসার চালাতেও আজ ডিফেন্স থেকে পুলিশ যে কোন চাকরির জন্যই প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে স্থানীয় একটি জিমে ট্রেনারের কাজ করে নিজের খেলার প্রয়োজনীয় খরচা তুলতে হয় অভিষেককে। তবে এভাবে আর কতদিন লড়াই করতে পারবেন তিনি। রেসলিং এর ময়দানে প্রতিপক্ষ দলের থেকেও, এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক দিক। সেক্ষেত্রে সরকারি ভাবে অর্থ সাহায্য না মিললে ওয়াল্ড রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ হয় তো অধরাই থেকে যাবে বাংলার এই যুবকের কাছে। তাই বর্তমানে গুপ্ত পরিবার সরকারের কাছে কাতর আবেদন জানাচ্ছেন পাশে দাঁড়ানোর। আর তাহলেই বাংলার মুখ আরো উজ্জ্বল করতে পারবে নিমতার এই সফল রেসলার অভিষেক গুপ্ত, বলেই আশাবাদী সকলে।এখন দেখার বাস্তবের এই সুলতান তার ইচ্ছা শক্তি তার লক্ষে পৌছে দিতে পারে কি না।তবে আক্ষেপ বাংলার ছেলে সোনা জয় করে নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো পর্যন্ত সে যোগ্য সম্মান পেলো না,এমনকি তার খোঁজও কেউ নেয়নি।