অবতক খবর,৪ জানুয়ারি,অভিষেক দাস,মালদা:- কার্নিভালের মঞ্চ থেকে কথা দিয়েছিলেন তুমি আবার চোখ দিয়ে দেখতে পাবে কিন্তু আর এই জগৎটাকে দেখতে পাওয়া হলো না খুদে জ্যোতিপ্রিয়র। হাসিখুশি মানুষটার কাছে প্রতিদিন যেতাম, কোনদিন খালি মুখে ফেরান নি। বাড়ি হোক বা পার্টি অফিস, দাদা আমার ছেলেটাকে দেখে খুব আফসোস করতো। বলতেন তোর ছেলেকে আমি মারা যাওয়ার আগে চোখ দিয়ে যাব । ও জন্মান্ধ হলেও কি হবে, একদিন সূর্যের আলো দেখবে। কিন্তু বাবলাদা নেই, আমার ছেলের কি হবে ? একথা বলেই চোখে জল চলে এলো অন্ধ জ্যোতিপ্রিয় রায়ের মা পারমিতা দত্ত রায়ের । শুধু তাই নয়, বাবলাদা বলেছিলেন ছেলে সমস্ত শিক্ষার খরচ প্রতিমাসে বহন করবে। ছেলে নরেন্দ্রপুর মিশনে পড়ে এ কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য যে সাথ দিল না। ছেলের জন্মান্ধ নিয়ে চিরজীবনের কষ্ট তো রয়েছেই, আরও বাড়তি কষ্ট একটা দিয়ে গেলেন আমাদের প্রিয় বাবলাদা।

ইংরেজবাজার পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ি এলাকায় থাকেন গৃহবধূ পারমিতা দত্ত রায়। তাঁর একমাত্র ১৩ বছরের ছেলে জ্যোতিপ্রিয় রায় জন্মান্ধ। বর্তমানে ছেলেকে কলকাতার নরেন্দ্রপুর মিশন ব্লাইন্ড স্কুলের আবাসিকে রেখেই পড়াশোনা করাচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে জ্যোতিপ্রিয়। পারমিতাদেবীর স্বামী জীবন রায় নামজাদা ব্যবসায়ী । ২০১৭ সালে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়। শহরের সর্বমঙ্গলা পল্লী এলাকার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বর্তমানে বাঁশবাড়িতে বাবার বাড়িতেই রয়েছেন গৃহবধূ পারমিতাদেবী। নিজের ছেলের খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি সংস্থায়ী সামান্য মাইনেতে কাজ করেন তিনি।

পারমিতা দত্ত রায় বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ছোট থেকেই জন্মান্ধ। ওকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ী আর.পি. মেমোরিয়াল ব্ল্যাইন্ড স্কুলে পড়িয়েছিলাম। এরপর এখন ছেলে কলকাতার নরেন্দ্রপুর মিশন ব্লাইন্ড স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে। ওখানেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ছেলের থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা, যাতায়াত বাবদ প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জোগাড় করতে হয়। খুব কষ্ট করে সেই টাকা দিচ্ছি।
বাবলাদের মত মানুষই হয় না। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে এটা অন্ধকার দিন নেমে এলো , কে জানতো। কেন মারলো ওরকম ভগবান সমান মানুষটাকে। যারা মেরেছেন তাদের ঈশ্বর কোনদিন ক্ষমা করবে না। তাদের যেন ফাঁসি হয় কঠোরতম শাস্তি হয় এই চাইছেন জ্যোতিপ্রিয়র পরিবার ও।