আজ বামপন্থী নেতা বিপ্লব মন্ত্রে দীক্ষিত আর এস পি দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরীর মৃত্যুদিনঃ শ্রদ্ধা নিবেদন
কাঁচরাপাড়া একদিন আশ্রয় ও পাহারা দিয়েছিল বিপ্লবী নেতা ত্রিদিব চৌধুরীকে
তমাল সাহা
থমথমে দিন। ছমছমে রাত। কালো গাড়ি আর কালো হাতে ছয়লাপ। রাজ্যজুড়ে তখন সন্ত্রাস, যে সন্ত্রাসের নামই হয়ে গিয়েছে ৭২-এর সন্ত্রাস। মানুষ বাহাত্তুরে হয়, সন্ত্রাসও বাহাত্তরে চলে আসে এই গাঙ্গেয় উপত্যকায়।
কমিউনিস্টরা তখন কংগ্রেসি কালোপাহাড়িদের দৌরাত্ম্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাঁচরাপাড়া থেকে পাণ্ডবেরা তখন বনবাসে। পার্টির কাজ চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। পার্টি মানে কমিউনিস্ট পার্টি– লড়াকু পার্টি। সেই পার্টি তখন কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলতো জনগণের কাছ থেকে আর দোকানে দোকানে গিয়ে। কাঁধে ঝান্ডাওয়ালা সেই সমস্ত মুখ আর হাতে কৌটো আর খুচরো পয়সার ঝকঝকানি শব্দ সেই সব এখন নস্টালজিক।
কাঁচরাপাড়ায় তখন আর এস পি– বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল করতেন গুটিকয়েক মানুষ। মার্কসবাদ- লেনিনবাদে বিশ্বাসী এটিও একটা কমিউনিস্ট পার্টি। এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। তিনি বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। আমৃত্যু সাংসদ ছিলেন। সাতবার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের জন্য লড়াই করে গেছেন এখনকার লোকদেখানো ইফতার পার্টিতে গিয়ে ফেজ-হিজাব মাথায় দিয়ে রঙ মেখে সঙ সাজাদের মতো নয়। একসময় বহরমপুরে ঈদের নামাজ শেষ হলে দলবেঁধে ত্রিদিব চৌধুরী ছুটে যেতেন অনুষ্ঠানে। পরস্পর আলিঙ্গন সেরে আসতেন।এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠেছিল বহরমপুর অঞ্চলে। থাক সে অনেক কহানি।
গাঙ্গেয় উপত্যকায় চলছে তখন শ্বেত সন্ত্রাস।
৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তিনি গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর। সঙ্গে ছিলেন কাঁচরাপাড়ার কর্মী রবীন্দ্রনাথ দত্ত। গোপনে মিটিং হবে সেখানে কর্মীদের প্রেরণা আর আড়ালে পার্টির কাজ চালানোর পরামর্শ দিতে।পার্টির কাজে তখন গুরুত্বই ছিল আলাদা। ঝৃঁকি শব্দটি কি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে?
কমিউনিস্ট পার্টি করবো আর ঝুঁকি নেবো না, তার কখনো হয়?
ফিরতে অনেক রাত হল। তাই রবিদার সাথে চলে এলেন সতীশ নন্দী বাই লেনে বলাই মল্লিকের ভাড়া বাড়িতে। রবিদারা তখন সেখানে থাকতেন। জায়গা কম, বৌদি চলে গেলেন অন্য বাড়ি শুতে। রবিদারা এখন থাকেন রজনীবাবু রোডে। ববিদা কাজ করতেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। কর্মচারী সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
ত্রিদিব চৌধুরী সামান্য কিছু খেয়ে একটা চৌকিতে কোনমতে রাতটা কাটিয়ে দিলেন। পরদিন ভোরে ট্রেন ধরে চলে গেলেন কলকাতা। সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত সাম্যবাদী আরএসপি দলের প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। তাঁর চিন্তা বৈদগ্ধ্য ছিল অপরিসীম।
তিনি চলে গেছেন ২১ ডিসেম্বর ১৯৯৭। দুঃসময়ে তাঁকে এক রাত আশ্রয় দিয়েছিল, পাহারা দিয়েছিল কাঁচরাপাড়া।