অবতক খবর,১১ জানুয়ারি: এ অঞ্চলের অন্যতম আর এস পি রাজনৈতিক কর্মী রবীন্দ্রনাথ দত্ত চলে গেলেন।
রবীন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বাম রাজনীতিমনস্ক একজন সহজ সরল মানুষ অবশ্যই প্রচার বিমুখ। নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জানুয়ারি তিনি আমাদের এই জনপদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন তার বয়স ছিল ৮৭। তিনি সিএম আর আই- তে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কে এই রবীন্দ্রনাথ দত্ত?
থমথমে দিন। ছমছমে রাত। কালো গাড়ি আর কালো হাতে ছয়লাপ। রাজ্যজুড়ে তখন সন্ত্রাস, যে সন্ত্রাসের নামই হয়ে গিয়েছে ৭২-এর সন্ত্রাস। মানুষ বাহাত্তুরে হয়, সন্ত্রাসও বাহাত্তরে চলে আসে এই গাঙ্গেয় উপত্যকায়।
কমিউনিস্টরা তখন কংগ্রেসি কালোপাহাড়িদের দৌরাত্ম্যে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাঁচরাপাড়া থেকে পাণ্ডবেরা তখন বনবাসে। পার্টির কাজ চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। পার্টি মানে কমিউনিস্ট পার্টি– লড়াকু পার্টি। সেই পার্টি তখন কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলতো জনগণের কাছ থেকে আর দোকানে দোকানে গিয়ে। কাঁধে ঝান্ডাওয়ালা সেই সমস্ত মুখ আর হাতে কৌটো আর খুচরো পয়সার ঝকঝকানি শব্দ সেই সব এখন নস্টালজিক।
কাঁচরাপাড়ায় তখন আর এস পি– বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল করতেন গুটিকয়েক মানুষ। মার্কসবাদ- লেনিনবাদে বিশ্বাসী এটিও একটা কমিউনিস্ট পার্টি। এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। তিনি বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। আমৃত্যু সাংসদ ছিলেন। সাতবার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।
এই আরএসপি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন কাঁচরাপাড়ার রবীন্দ্রনাথ দত্ত। ৭০ দশকের প্রাথমিক পর্ব ১৯৬৩- ৬৪সাল থেকে তাকে এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে দেখেছি। তিনি তখন থাকতেন সতীশ নন্দী বাইলেনে।
গাঙ্গেয় উপত্যকায় চলছে তখন শ্বেত সন্ত্রাস।
৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ তিনি গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর। সঙ্গে ছিলেন কাঁচরাপাড়ার কর্মী রবীন্দ্রনাথ দত্ত। গোপনে মিটিং হবে সেখানে কর্মীদের প্রেরণা আর আড়ালে পার্টির কাজ চালানোর পরামর্শ দিতে।পার্টির কাজে তখন গুরুত্বই ছিল আলাদা। ঝুঁকি শব্দটি কি এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে?
কমিউনিস্ট পার্টি করবো আর ঝুঁকি নেবো না, তার কখনো হয়?
ফিরতে অনেক রাত হল। তাই রবিদার সাথে চলে এলেন সতীশ নন্দী বাই লেনে বলাই মল্লিকের ভাড়া বাড়িতে। রবিদারা তখন সেখানে থাকতেন। জায়গা কম, বৌদি চলে গেলেন অন্য বাড়ি শুতে। রবিদারা এখন থাকেন রজনীবাবু রোডে। ববিদা কাজ করতেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। কর্মচারী সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
ত্রিদিব চৌধুরী সামান্য কিছু খেয়ে একটা চৌকিতে কোনমতে রাতটা কাটিয়ে দিলেন। পরদিন ভোরে ট্রেন ধরে চলে গেলেন কলকাতা। সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত সাম্যবাদী আরএসপি দলের প্রতিষ্ঠাতা ত্রিদিব চৌধুরী। তাঁর চিন্তা বৈদগ্ধ্য ছিল অপরিসীম।
একদিন তাকে পাহারা দিয়েছিল কাঁচরাপাড়া এবং অবশ্যই রবিদা।
রবি দা সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। নীরবে পথ চলতেন। আগ বাড়িয়ে তেমন কথা বলতেন না। বাছাই করা মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। রজনী বাবু রোডে আসবার পর তার সঙ্গে আমার নিয়মিতই কথা হতো। নিশ্চিত রাজনৈতিক কথাবার্তা– বর্তমান সময় এবং পরিবেশ বিষয়ে। তিনি যে একজন রাজনৈতিক কর্মী এটা বোঝার উপায় ছিল না। অন্তরালে কাজ করাই ছিল তার জীবনের মন্ত্র।