সম্পা দাম পাল,অবতক খবর,২৮ এপ্রিলঃ আবার কি ফিরে এলো সেই পুরনো দিন? সেই নস্টলজিয়া? এই করোনা মহামারী কি সকলকে মনে করিয়ে দিল ছাদের কথা? এতদিন যে ছাদ ফাঁকা ছিল যেখানে কাউকে দেখা যেত না, সেই ছাদই আটকে দিল নতুন প্রজন্মকে। মানুষ এখন ছাদে ছাদে।

আমরা বলছি ঘুড়ি এবং লুডোর কথা। এই লকডাউন-এ ঘুড়ি এবং লুডোর বাজার রমরমা। এই যে নতুন প্রজন্মকে দেখা যেত অলিতে গলিতে, সেখানে এখন গলি ফাঁকা। করোনা ভাইরাসের জেরে ঘরে বসে লুডো এবং ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হয়ে উঠেছে এখন মানুষের অবসর বিনোদনের সম্বল। ঘরে ঘরে এখন সবাই ব্যস্ত লুডো খেলতে। ‌আর বাড়ির পুরুষরা দুপুরের খাওয়া সেরে চলে যাচ্ছে ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে। কার সুতোয় কত জোর, কে কার ঘুড়ি আগে কাটবে চলছে এই লড়াই। ভোকাট্টা!

এমনও দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন কে কটা ঘুড়ি কাটলো সেই হিসেব সন্ধ্যাবেলা সবার মুখে মুখে। অন্যদিকে মানুষ যখন ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত,তখন অলিতে গলিতে দেখা যাচ্ছে কিছু কিশোর দলবেঁধে হাতের লাঠি,গাছের ডাল নিয়ে ছুটছে কাটা ঘুড়ির পিছনে। কে কার আগে কাটা ঘুড়ি লুফবে! শুধু ছোট নয়, এই দলে রয়েছে কিছু বড়রাও। যেই না একটা ঘড়ি কাটলো অমনি দে দৌড় ঘুড়ির পেছনে। শুধু অলিতে গলিতেই নয়, ছাদ থেকে ছাদেও মানুষ ঘুড়ি ধরার জন্য ছুটছে। তারা এই দুরন্তপনা ভুলে গিয়েছিল কিন্তু এই করোনা সব মনে করিয়ে দিল।

এখন এই মুহূর্তে শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের ঘর থেকে বইয়ের বোঝা অনেকটা হলেও কমেছে। আর সেই সুযোগেই বাইরে তারা নানা রকম পুরনো খেলায় মত্ত। সবথেকে বেশি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল আজই কাঁচরাপাড়ার এক নেতা কাটা ঘুড়ি ধরার জন্য এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফ দিতে গিয়ে পড়ে যান এবং পায়ে সামান্য চোট পেয়েছেন। আবার অন্যদিকে বাড়ির মহিলারা ঘরে বসে খেলছেন লুডো। সে অনলাইন হোক বা অফলাইন।

আজকের একটি ঘটনা, স্বামী-স্ত্রী পরিবারের সকলে মিলে লুডো খেলছিল।স্ত্রী তার স্বামীকে লুডোতে হারিয়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করলো তার স্ত্রীকে।

বলতে গেলে করোনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল একটা পুরাতন স্মৃতি। তবে কি করোনা সেই পুরনো দিন ফিরিয়ে দিচ্ছে? কিছু বোঝাই যাচ্ছে না। একদিকে মৃত্যু আর অন্যদিকে জীবন। দুটি একইসঙ্গে দোদুল্যমান অবস্থায় চলছে। জীবনের তো এই খেলা, কখনো আনন্দ কখনো দুঃখ। করোনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল পুরাতন স্মৃতি,যা মানুষ ভুলতে বসেছিল।

যারা সবেমাত্র যৌবনে পা দিয়েছে, তারাও ছাদে উঠে ওই ঘুড়ি ওড়ানোর ফাঁকে ঝালিয়ে নিচ্ছে সদ্য গড়ে ওঠা তাদের পাশের বাড়ি অথবা পাড়ার প্রেম। আবার যারা নতুন প্রজন্মের কচিকাঁচা তারাও ঘুড়ি ওড়ানো লুডো খেলা আয়ত্ত করে নেয়ার একটা সুযোগ পেল। যদি এই লকডাউন না চলতো তাহলে হয়তো জীবনটা মুঠোফোনেই বন্দী থেকে যেত। নতুন প্রজন্ম শুধু গল্পই শুনত ঘুড়ি ওড়ানোর এবং ঘরে বসে লুডো খেলার মজা ও আনন্দের কথা। কারণ এই প্রজন্মের বাবা-মায়ের কাছে ততটা সময় নেই যে ঘরে বসে লুডো খেলবেন বা ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়াবেন।

করোনার এই ভয়াবহতাকে সামনে রেখে জীবন মৃত্যুর এক রহস্যময়তার আধারে মানুষের বিভিন্নরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে।