গান স্যালুট সম্পর্কে কিছু কথা।
এক কবির দাহপর্ব দেখলাম।সেই দাহপর্ব দেখে কি অভিজ্ঞতা হল শুনুন।

কবির দাহপর্ব
তমাল সাহা

সাধারণ মানুষ মরে
কবিরা প্রয়াত হন,
প্রয়াত বলে কেন জানিনা।
রবীন্দ্রসদনে দীর্ঘক্ষণ শায়িত রেখে পচনক্রিয়া আরও বাড়ানোর জন্য
অথবা অশুদ্ধ হাতে মাল‍্যদানের প্রক্রিয়া
দীর্ঘায়িত করার জন্য সম্ভবত।

আমিও সেদিন
রবীন্দ্রসদনে গিয়েছিলাম।
কবিকে দেখতে নয়,ভিড় দেখতে।
কবি সত্যদ্রষ্টা কি না চাক্ষুষ করতে।

ভিড়ে খুঁজে পেলাম
বুদ্ধি বন্ধকরাখা মানুষ,
পরান্নভোজী, কৃপাপ্রার্থী,
উমেদার, প্রবঞ্চক,
প্রশস্তিবাক্য উচ্চারক,
আপাদমস্তক ভীতু,
ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ স্তাবক —
সবাইকে,
কবি যেমন বলে গিয়েছিলেন
আর খুঁজে পেলাম নতুন শ্রেণীর কিছু
দালাল,আমলা এবং রাজাকেও।

কবি যাকে আজ পর্যন্ত খুঁজে
পাননি আমিও পাইনি তাকে
তন্নতন্ন করে খুঁজে সেই ভিড়ে—
কলকাতার যীশু
ভিখারী মায়ের শিশুকে,
সত্যবাদী সরল সাহসী শিশুটিকে
অথবা নিষ্পাপ বালককে—
যে দুরন্ত বেগে চলমান কলকাতাকে স্তব্ধ করে দিয়ে রাস্তা পেরিয়েছিল
যে স্পর্ধিত উচ্চারণে বলেছিল,
রাজা,তোর কাপড় কোথায়?
বা যে ধর্মযাজকদের উর্দি খুলে নেবার
হিম্মৎ দেখাবে।

একুশটি গুলিতে কত রাষ্ট্রদ্রোহীকে
মারা যায় জানিনা।
কবি গান স্যালুট চেয়েছিল কিনা
তাও জানিনা।
একটি গুলির দাম কত তাও জানিনা।

গান স্যালুট মানে কি?
গানকে স‍্যালুট
অথবা গান দ্বারা স‍্যালুট?
এই একই বন্দুকে বিদ্রোহী সত্ত্বাকে খুন করে যে পুলিশ, আবার সেই বন্দুকেই কবিকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয় সেই পুলিশ?
কবির মৃত্যুও কি শেষপর্যন্ত
রাষ্ট্রীয় পণ্য হয়ে যায়?

তবে,বন্দুকের একুশটি তোপে
একজন মৃত কবিকে আরও
একুশবার মরতে দেখেছি আমি।

সন্ধ্যালগ্ন হয়ে এল—
ভাগীরথীর পারে
নিমতলা মহাশ্মশানের উপরে
আকাশ ভর্তি নক্ষত্র
এক এক করে ফুটে উঠল।

সেই নক্ষত্রের আলো
মেখে আমি ফিরে এলাম।
কানে তখনও তোপধ্বনি,
রাষ্ট্রীয় তোপধ্বনি লেগে রয়েছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় গর্জন উপেক্ষা করে
শিশুটি কবির হাত ধরে হেঁটে চলেছে…