জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা কাণ্ডের শতবর্ষ।
একেই বলে দেশপ্রেম। একেই বলে প্রতিশোধ। প্রতিশোধ কিভাবে পুষে রাখতে হয় কে দেখালো? কিভাবে দেখালো একুশ বছর পর? শুনুন

এভাবেও প্রতিশোধ নেওয়া যায়
তমাল সাহা

প্রতিশোধ যদি প্রতিশোধের মতো হয়,
সে কোথায় বসত করে? অন্তরে।
একুশ বছর পেরিয়ে গেলেও
স্মৃতির গুরুত্ব ধরে রাখে
পঁচিশ বছরের পুরনো কার্তুজ ও
পিস্তলের যন্তরে।

একেই বলে দেশপ্রেম, মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো।
বিয়াল্লিশ দিনঅনশনের পরও হাসিমুখ,
গলদেশে ফাঁসির রজ্জু জড়ানো!

উধম সিং!
সে তো গদর নেতা বিপ্লবী —
এক শের, বাঘ!
এসব কথা মনে পড়ে তোর, জালিয়ানওয়ালাবাগ!

তেরো এপ্রিল উনিশশো উনিশ
সেই বাগিচায় দেখি নাতো কোনো ফুল!
হাজার জনতা নারী-পুরুষ-শিশু
জড়ো হয়েছিল বিলকুল।

প্রতিবাদ যদি প্রতিবাদের মতো হয়,
বাঁধ ভেঙে নেমে আসে জোয়ার।
কোথায় তোর তাকত দেখি
কত বড় কর্নেল মাইকেল ডায়ার?

উধম সিং তখন কিশোর এক খালসা অনাথ
তৃষ্ণার্তদের জোগাচ্ছিল জল।
মুহূর্তে গুলির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে…
একের পর এক মাটিতে দেহ পড়ে যায়— নেমে আসে মৃত্যুর ঢল।

গোরখা রেজিমেন্ট ঢুকে পড়ে,
ঢুকে পড়ে সাঁজোয়া গাড়ি।
হাজার হাজার রাউন্ড গুলি চলে ভারী।
মানুষ পালাবে কোথায়?
কোথায় পথ,চারদিক প্রাচীরে ঘেরা।
নেটিভ খুনের এই তো সুযোগ,
কেউ করে হাতছাড়া?

পনেরো মিনিটে দু হাজার লাশ
সাম্রাজ্যবাদ সাবাস! সাবাস!

নির্বিচারে হত্যা, খুন, রক্তপাত—
এ কোন ফাইট!
নীরব রবীন্দ্রনাথ গর্জে ওঠেন,
ছুঁড়ে ফেলে দেন নাইট।

তুমি কি জানো বাগের কুয়োয়
কত জীবন্ত দেহ হয়েছিল পাথর প্রোথিত?
বণিক এসেছিল রাজদন্ড রূপে সামনে সঙ্গিন উদ্যত!

মার তো ফিরিয়ে দিতেই হয়,
কে ফিরিয়ে দিয়েছিল মার!
মনে রাখো দলটি গদর,
নামটি রাম মহম্মদ সিং আজাদ তাহার।

কার কোথায় লেখা আছে ললাট লিখন!
তুমি পালাবে কোথায়, সেই সুদূর লন্ডন?
আমিও তো যেতে পারি সেইখানে
যখন আমার হাতে লেখা আছে তোমার মরণ।

লন্ডনে ডায়ার তখন ক‍্যাক্সটন
হলে দিচ্ছে ভাষণ।
দুটো গুলিতেই তার ভূতল পতন।

দুটি গুলি কি করে দু হাজারের বদলা নেয় আমি কি জানি!
দু হাজারের মৃত্যু-প্রতিশোধ লিখে রাখে
পঁচিশ বছরের দুটি কার্তুজ ও পিস্তল একখানি।

উধম বলে,
যে পিস্তলে তুমি গুলি করেছো দু হাজার।
সেই পিস্তল ও গুলিতে আমি তোমাকে দিচ্ছি উপহার।

বেয়াল্লিশ দিন অনশনের পরও এতো হিম্মৎ!
ফাঁসি রজ্জু তাকে দেখে ভীষণ চমকায়।
গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
উধম! এই উধম! তুই আমার কাছে আয়।