এই দেশ এই গান্ধী
তমাল সাহা
১) দেখিনি শুনেছি
আমি তো ঘটনাস্থলে ছিলাম না
দৃশ্যটা দেখিনি
গুলি খেয়েই গান্ধিজি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন
শ্বাসবায়ু বেরোনোর আগে তিনি নাকি উচ্চারণ করেছিলেন– হা, রাম!
স্বীকার করি
আমি কানে খাটো হতে পারি
শব্দই ব্রহ্ম– স্বরটি বাতাসে ভেসে এসেছিল
আমি শুনেছিলাম, হারাম…!
বাকিটুকু বলার আগেই হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় তার!
২) রাম! রাম!
রাম! রাম!
নাথুরাম আর জয় শ্রীরাম
দুটোই তো রাম
দুটো রামে কতটা তফাৎ বুঝিয়ে দিল গান্ধীজীর খুন
এখনো বোঝোনা তুমি
কারা দাঙ্গাবাজ কারা লাগায় আগুন!
৩) হায় রাম
তুমি কি করে এতো আগে জানতে?
রামধুন তো রোজ সকালে গাইতে!
মারা যাবে আরেক রামের হাতে?
বাণ নয়, কটা গুলি ছিল তোমার বরাতে!
শ্বাসপতনের আগে বলেছিলে,
হায় রাম!
এখন ওরা বলে, জয় শ্রীরাম!
:
৪) এতো মানুষ
ভারতবর্ষে এখন বাস্তুঘুঘুরাজ
ধান খেয়ে যায় চড়াই বাবুই বুলবুলি
তোমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ
স্বাধীন ভারতবর্ষে তুমিই খেলে প্রথম গুলি!
কেন ধান্দাবাজ কামাইবাজ হওনি
রামধুন গেয়ে ন্যাংটো ধুতি পরে চরকা কেটে কাটিয়ে গেলে দিন
তবুও এত মানুষ কোত্থেকে পেলে কে জানে
ভারতবর্ষ থেকে এখনো ধর্মবিদ্বেষ হয়নি বিলীন।
৫) গান্ধী মহারাজ
সুকান্ত নাকি কিশোর কবি
সেও তোমাকে নিয়ে লিখেছিল পদ্য–
‘…তখনি মুছে গেছে ভীরু চিন্তার হিজিবিজি।
রক্তে বেজেছে উৎসব, আজ হাত ধরো গান্ধীজী।’
রবীন্দ্রনাথ তো লিখেই ফেলল–
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।’
রবীন্দ্রনাথ বলে, তুমি গান্ধী মহারাজ
আর আমরা?
তুমি নাকি ইংরেজের দালাল!
তুললাম এই আওয়াজ।
আমরা দেখলাম বেলেঘাটায় তোমার অনশন।
ক্ষমতার দালালেরা, তখন মধ্যরাত
মেলালো হাতে হাত
স্বদেশের বুক দ্বিখণ্ডিত দুভাগ।
তবুও এখনো কমেছে কি তোমার প্রতি তাদের রাগ?
তোমাকে দেখলাম নেংটিপরা-মানুষ
ঘুরে বেড়াচ্ছো নোয়াখালি বিধ্বস্ত দাঙ্গায়
শান্তি স্থাপনে চলে এলে, সেদিন ছিল মঙ্গলবার
১৯ আগস্ট ১৯৪৭ কাঁচরাপাড়ায়।
আজ এই জনপদ অবনত তোমার পদপ্রান্তে
নতজানু হয়ে তোমাকে প্রণাম জানায়।